ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪ ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ
পাকিস্তানি জান্তাদের শোষণ-নিপীড়নের প্রথম আঘাত হয়েছিল বাংলা ভাষার ওপর। আটচল্লিশ থেকে বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি হয়ে ছাপ্পান্নতে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি-দীর্ঘ এক সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা ছিল এ দেশের নারীদেরও। কিন্তু তাদের নাম সেভাবে উচ্চারিত হয় না। সর্বজন পরিচিত মাত্র কয়েকজনের নাম এলেও তাদের কথাও খুব কমই বলা হয়। তাদের নামগুলো আজও অনেকটা আড়ালেই রয়ে গেছে।
ভাষা আন্দোলনের পুরো সময়টায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নারীরাও অংশ নিয়েছিলেন। তারা রাস্তায় নেমেছিলেন। মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন, পোস্টার লাগিয়েছেন, আন্দোলন চালিয়ে নিতে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তারা আহত হয়েছেন। আবার আহত সতীর্থদের সেবাও করেছেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তাদের এ অবদান আজও পূর্ণাঙ্গরূপে আসেনি। অনেকে ইতোমধ্যে নীরবে-নিভৃতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছেন হাতেগোনা কয়েকজন। তবে কারও কারও পাথেয় ছিল অঞ্চল বা এলাকাভিত্তিক মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান।
নারী ভাষা সংগ্রামীদের সম্পর্কে প্রয়াত ভাষা সংগ্রামী ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙে যে কজন নারী ভাষা সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কথা আমরা জানি। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন, তাদের কথাও খুব একটা সামনে আসে না। নারী ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গবেষণার অবকাশ রয়েছে।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীনের বক্তব্যের পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বার লাইব্রেরিতে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করা হয়।
সেখানে তৎকালীন ইডেন কলেজের ছাত্রী মাহবুবা খাতুন বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি স্বীকার করে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে মেয়েরা জীবন বিসর্জন দেবে। ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ১৯৫২ সালের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালিত হয়। এ সময় প্রায় ৫০০ পোস্টার লেখার দায়িত্ব নাদিরা বেগম ও শাফিয়া খাতুনকে দেওয়া হয়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের নিয়ে সে দায়িত্ব পালন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতাল পালনের জন্য দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি চলে। এতে মেয়েদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। লায়লা সামাদ, শামসুন নাহার, শাফিয়া খাতুন, সারা তৈফুর, রওশন আরা বাচ্চু, সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা রহমান, হালিমা খাতুন, কায়সার সিদ্দিকী প্রমুখ ছাত্রী ঢাকার তৎকালীন বকশীবাজার কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ), মুসলিম গার্লস স্কুল, বাংলা বাজার গার্লস স্কুল, কামরুন্নেসা গার্লস স্কুলে গিয়ে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আমতলায় গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্তের পর ছাত্ররা কয়েকটি দলে বের হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এরপর মেয়েদের একটি দল বের হয়। যেখানে সুফিয়া আহমেদ, রওশন আরা বাচ্চু, শাফিয়া খাতুন, শামসুন্নাহার, সারা তৈফুরসহ বেশ কয়েকজন ছিলেন। তাদের ওপরও পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
জানা যায়, ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ইউনিয়নের সভাপতি শাফিয়া খাতুনের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের একটি সভা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আজিমপুর কলোনির মেয়েরা প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। সেখানে কমলাপুরসহ ঢাকার অন্য এলাকা থেকে মেয়েরা যোগ দেন।