আমরা সাধারণত শরীরের যে কোনো ব্যথা বা মাথা ব্যথার যন্ত্রণায় পেইন কিলার খেয়ে থাকি, যা ক্ষণিকের জন্য স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদি জীবনে ডেকে আনতে পারে বিপদ।
পেইনকিলার হলো এক ধরনের ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ। অর্থাৎ ওষুধের দোকানে গিয়ে চাইলেই পাওয়া যায় এই ওষুধ। তাই মানুষও সেই সুযোগে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এই ওষুধ খান। এক দুটি পেইনকিলার খেলে কোনো অসংগতি না হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও প্রায়ই এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠাকে ভালো লক্ষণ বলে মনে করছেন না চিকিৎসকরা।
খোলাবাজারে নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেন্টরি গোত্রের ওষুধ বেশি পাওয়া যায়। যেমন- ডাইক্লোফেনাক, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ইত্যাদি৷ এই ওষুধগুলো ব্যথা কমানোর পাশাপাশি প্রদাহও কমায়৷ কিন্তু এই জাতীয় ওষুধগুলো খাওয়ার ফলে বদহজম, পেটব্যথা, গ্যাসট্রাইটিস, রক্তপাত এবং আরও অনেক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, অপ্রয়োজনে বেশি বেশি পেইন কিলার খেলে শরীরের কী কী ক্ষতি করতে পারে।
১. লিভারের ক্ষতি হওয়া
ব্যথা উপশমকারী ওষুধ, বিশেষ করে প্যারাসিটামল লিভারের ক্ষতি করতে পারে। তাই, প্যারাসিটামল পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। প্রতিদিন ৮টি ট্যাবলেট (৫০০ মিলিগ্রাম) খেলে লিভারের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। তাই ঠান্ডা লাগা, গা-হাত-পা ব্যথা, জ্বর। যাই হোক না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই প্যারাসিটামল খান।
২. পেটে ব্যথা এবং আলসার
পেইন কিলার আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন এবং ন্যাপ্রোক্সেন গ্রহণের ফলে পেটে ব্যথা, জ্বালা করা এবং অন্যান্য ক্ষতি হতে পারে। এমনকি ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণের কারণে পেটে আলসারও হতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই আলসার আছে, তাদের রক্তপাত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
৩. ডিপ্রেশন
পেইন কিলার ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে। তাই যারা বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং অ্যান্টিডিপ্রেশন্ট গ্রহণ করছেন, তারা ঘন ঘন ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।
৪. কিডনি ফেইলিউর
উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা আইবুপ্রোফেন এবং ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করলে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এর থেকে কিডনি ফেইলিউর বা ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া যারা ইতিমধ্যেই কিডনি রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
৫. গর্ভপাত
গর্ভাবস্থার প্রথম ২০ সপ্তাহে যদি কেউ ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করেন, তাদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, পেইন কিলার ওষুধগুলো হরমোনের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে। তাই গর্ভাবস্থায় যদি আপনি কোনো কারণে ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. রক্তপাত হওয়া
অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রোক্সেনের মতো পেইন কিলারগুলো রক্ত পাতলা করে। যাদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা এবং হার্টের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই ওষুধগুলো উপকারী হতে পারে। তবে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ গ্রহণ করেন, তাদের যে কোনো ব্যথানাশক ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত। এতে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে এবং অত্যধিক রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
৭. হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। যারা এই ওষুধগুলো ব্যবহার করেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
সূত্র: বোল্ড স্কাই