এপ্রিল ২৯, ২০২২ ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ
প্রতিবেশী গ্রিসের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে তুরস্কের যুদ্ধবিমান। গ্রিসের অভিযোগ, এর মধ্য দিয়ে ন্যাটোর ঐক্যকে ক্ষুণ্ণ করেছে তুরস্ক। পাল্টা অভিযোগে আংকারা বলছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে তুরস্ককে উসকানি দিয়েছে এথেনস।-খবর আলজাজিরার
গ্রিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বুধবার এথেনসে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এর আগে কয়েকবার অ্যাজিয়ান সাগরের ওপর দিয়ে তুরস্কের বিমান উড়াল দিয়েছে। যাকে বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য উসকানি আখ্যায়িত করেছে এথেনস।
বৃহস্পতিবার গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস বলেন, এ ঘটনায় তিনি ন্যাটো সেক্রেটারি ইয়ান স্টলটেনবার্গকে অবহিত করেছেন। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি তাকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা করেছি। একটি ন্যাটো মিত্রের এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস আরও বলেন, এতে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও ন্যাটোর ঐক্য ক্ষুণ্ণ হবে। বর্তমানে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের মধ্যে যেখানে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার, তখন এমন উসকানি ন্যাটোর জন্য ক্ষতিকর।
গ্রিস সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, তুরস্কের যুদ্ধবিমানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের পর পরিবেশ আর ভালো নেই। এরআগে দুই দেশের মধ্যে কয়েক দফা আস্থা-উৎপাদনকারী বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এরপর আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতে পারে না।
তবে গ্রিসের এই বক্তব্যের জবাবে তুর্কিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যাথেনসের মন্তব্যে বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন ঘটেনি। গ্রিস উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই উসকানির জবাব দিয়েছে তুর্কিশ বিমান বাহিনী।
তুরস্কের বিবৃতিতে বলা হয়, গেল ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রিসের বিমান বাহিনী আমাদের উপকূলের কাছ দিয়ে উসকানিমূলক ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের রিসোর্ট শহর ডাতকা, ডালাম্যান ও ডিডিমে তারা বারবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
এতে আরও বলা হয়, যখন উত্তেজনা উসকে দেওয়ার একটি পক্ষ গ্রিস, তখন তারা আমাদের বিরুদ্ধে আবার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে। তাদের এই আচরণ সম্প্রতি অর্জন করা ভালো প্রতিবেশী ও ইতিবাচক এজেন্ডার সঙ্গে বেমানান।
ন্যাটোমিত্র হিসেবে ও দ্বিপাক্ষিকভাবে আস্থা-অর্জনের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক সমর্থন জানাতে গ্রিসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। ১৯৯৬ সালে একটি পরিত্যক্ত আজিয়ান দ্বীপ নিয়ে যুদ্ধের কিনারে গিয়ে ঠেকেছিল দুই প্রতিবেশী দেশ। এরপর ভূমধ্যসাগরে জ্বালানি উৎস নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উত্তেজনা বাড়লেও তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতি হয়।
বিভিন্ন ইস্যুতে এখনো তাদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। ভূমধ্যসাগরে মহীসোপান, নৌ অধিকার, আকাশসীমা, আজিয়ানের দ্বীপের মর্যাদা ও বিভক্ত নৃতাত্ত্বিক সাইপ্রাস নিয়ে দুদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতে গ্রিসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আংকারা। গেল মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যকার বৈঠকগুলোতে যেসব অগ্রগতি হয়েছিল, আকাশসীমা লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক তুরস্কের অবস্থানে তা অবমূল্যায়িত হয়েছে। অবিলম্বে এসব উসকানি বন্ধ করতে হবে।
গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে তুরস্ক যোগ দেয়নি। ইইউ পরিবারের সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকা কোনো দেশের আচরণ এমন হতে পারে না।