বিসিআইসির তালিকা থেকে বাদ ১৩ প্রতিষ্ঠান

বিসিআইসির তালিকা থেকে বাদ ১৩ প্রতিষ্ঠান

অর্থনীতি স্লাইড

অক্টোবর ৩০, ২০২৪ ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ঠুনকো অজুহাতে ১৩টি মেরিন সার্ভেয়ার বা জরিপকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এর স্থলে যোগ করেছে ‘অনভিজ্ঞ’ তিনটি প্রতিষ্ঠান। বাদ পড়া প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ও তালিকাভুক্তি থাকলেও কেবল ‘অডিট রিপোর্ট’ এর দোহায় দিয়ে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার ‘অনৈতিক আবদার’ রক্ষা না করার কারণে এবং একজন কর্মকর্তার পছন্দের অডিট ফার্মের কাছে না যাওয়ার কারণেই তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিসিআইসি চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ বলছে, কারিগরি কমিটি ও বিসিআইসি বোর্ড টেন্ডার যাচাই-বাছাই করে যেসব প্রতিষ্ঠান সব শর্তপূরণ করেছে এবং চাহিত কাগজপত্র জমা দিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের শর্ত পূরণ করতে পারেনি তারা তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এখানে অন্য কোনো কারণ বা অজুহাতের অভিযোগ সঠিক নয়।

জানা যায়, বিভিন্ন আমদানি পণ্যের পরিমাণ ও গুণগতমান নির্ধারণ করে থাকে জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মেরিন সার্ভেয়ার হিসাবে পরিচিত এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সার্ভেয়ার জাহাজে উপস্থিত হয়ে জরিপ শেষে রিপোর্ট দেয়। এ ক্ষেত্রে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান আমদানিকারক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি গ্রহণ করে থাকে। তাদের জরিপের ওপরই নির্ভর করে আমদানিকারক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমদানি পণ্যটি গ্রহণ করবে কি করবে না তা। পণ্যের পরিমাণে কম হলে বা গুণগত মান ঠিক না থাকলে জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে রপ্তানিকারক তথা সাপ্লাইয়ারের কাছে অভিযোগ (ক্লেইম) করতে পারবেন আমদানিকারক। এই জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) এর লাইসেন্সভুক্ত। অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ন্ত্রণ করে।

সূত্র জানায়, বিসিআইসি বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করে। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইক্যুইপমেন্ট বা যন্ত্রপাতিও আমদানি করে থাকে। সংস্থাটি প্রতি দুই বছর অন্তর টেন্ডারের মাধ্যমে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করে থাকে। সম্প্রতি তালিকাভুক্তির টেন্ডার আহ্বান করলে বিদ্যমান ২৬টি ও নতুন করে তিনটি প্রতিষ্ঠানসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার জমা দেয়। কিন্তু দেখা গেছে, যাচাই-বাছাই শেষে পূর্ব থেকে তালিকাভুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তালিকাভুক্ত পুরোনো ১৩টি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নতুন ৩টি প্রতিষ্ঠানসহ ১৬টি জরিপকারী প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

যে ১৩টি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে এর মধ্যে রয়েছে, এমএনএস ইন্সপেকশন কোম্পানি, রাহীদ ইন্সপেকশন কোং, তিস্তা সার্ভেয়ার্স, ন্যাশনাল কার্গো সার্ভেয়ার্স, রূপসা সার্ভেয়ার্স, অ্যারিয়ান সার্ভেয়ার্স, মধুমতি সার্ভেয়ার্স, প্যাসিফিক ইন্সপেকশন, ইউনিয়ন ইন্সপেকশন, কর্ণফুলী ইন্সপেকশন, ফেয়ারডিল ইন্সপেকশন ও বাংলা ডিল ইন্সপেকশন। একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়নি।

২৭ অক্টোবর বিসিআইসি চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়, মেরিন সার্ভেয়ার হিসাবে মংলা বন্দরের তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা টেন্ডার শিডিউলে রাখা হয়নি। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অডিট রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। মূলত বিসিআইসির চট্টগ্রাম শাখা কার্যালয়ের ইনচার্জ মোহাম্মদ সোয়ায়েব তার ব্যক্তিগত পছন্দের ল’ফার্ম থেকে অডিট রিপোর্ট নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করেন। যেসব প্রতিষ্ঠান ওই ল’ফার্ম থেকে অডিট রিপোর্ট গ্রহণ করে জমা দিয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানকেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই কারসাজির সঙ্গে বিসিআইসি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পিযুস কর্মকার এবং ঢাকা কার্যালয়ের রবিউল জড়িত বলে অভিযোগ করা হয় চিঠিতে।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের এমএনএস ইন্সপেকশন কোম্পানির মালিক পিযুশ তালুকদার বলেন, তিনি বিসিআইসিতে ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন। ২৫-৩০ বছর ধরে একই সংস্থায় কাজ করে আসা ১৩ মেরিন সার্ভেয়ার্সকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অডিট রিপোর্টের দোহাই দিয়ে এবং অনৈতিক আবদার না মেটানোর কারণে। তারা বিসিআইসি চেয়ারম্যান বরাবরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বিসিআইসি চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান।

অভিযোগ ও বিসিআইসি চেয়ারম্যান বরাবরে প্রদত্ত চিঠি প্রসঙ্গে সংস্থার চট্টগ্রাম শাখার ইনচার্জ মোহাম্মদ সোয়ায়েব বলেন, ‘মেরিন সার্ভেয়ার্স তালিকাভুক্তির নতুন যে ফরমেট (পিএসএম) নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে অন্যান্য শর্তের পাশাপাশি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট জমাদানের বিষয়টি এবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিসিআইসি বোর্ড এটি করেছে। কারিগরি কমিটি ও বোর্ড যাচাই-বাছাই করে যেসব প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের শর্ত পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে- সেসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেছে। ২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে যোগ্য বিবেচিত হয়েছে। বাদ পড়া ১৩ প্রতিষ্ঠান যেসব অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। তবে বাদ পড়াদের চিঠি যদি বিসিআইসি বোর্ড পুনর্বিবেচনা করে সেটি ভিন্ন বিষয়। এখানে কারসাজির কিছুই হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *