ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
পাকিস্তানের নির্বাচন যেন এক ‘রোমাঞ্চকর নাটক’। খানিক পরপরই পালটে যাচ্ছে চরিত্র। পলকেই ‘খলনায়ক’ হয়ে যাচ্ছেন কিছুক্ষণ আগের ‘নায়ক’। গল্পের কাহিনিতে রীতিমতো ‘ভূতের নাচ’।
তবে শুক্রবার, নির্বাচনের ঠিক আটদিনের মাথায় জল যেন ঘোলা হয়ে উঠেছে। সেনা ছকের পাতানো নির্বাচনের ভোট জালিয়াতির বিরেুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
বিক্ষোভের এ মিছিল আরও লম্বা করেছে পিটিআই-এর সমমনা বিরোধীরা। নির্বাচন বাতিলে মামলাও হয়েছে সুপ্রিমকোর্টে। অবস্থা এমন-ঘর বাঁধার আগেই ভাঙনের সুর শুনছে সেনা দোসর নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। বিরোধীরা সমস্বরে বলছেন, দুবছরও টিকবে না শাহবাজ শরিফের সরকার। কেউ বলছেন, ৮ থেকে ১০ মাস। সবমিলিয়ে কারচুপির এ নির্বাচন ঘিরে ফুঁসে উঠছে পাকিস্তান। জিও টিভি, ডন।
মৌলিক অধিকারের সঠিক ন্যায্যতা না পেয়ে জনমনেও তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে দেশটির নির্বাচন কমিশনকে। জনগণ পতাকা হাতে উচ্চৈস্বরে স্লোগান দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডেপুটি কমিশনের অফিসগুলোয়।
শুক্রবার বাদ জুমা র্যালি বের করেছেন বিভিন্ন দলের অসংখ্য নেতা। কড়া ভাষায় তিরস্কার করছেন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে। পাতানো নির্বাচন নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে করা হচ্ছে মামলা। এমনকি ছলচাতুরীর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ পিটিআই-এর ৮৫ আসন ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে। শুক্রবার এ অভিযোগ তুলেছেন পিটিআই কেন্দ্রীয় তথ্য সেক্রেটারি রওফ হাসান। তার মতে, ২০২৪ সবচেয়ে বড় ‘ভোট জালিয়াতির’ বছর।
বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী, ১৭৭টি আসন (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) আমাদের হওয়ার কথা ছিল, দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯২টি। ৮৫টি আসন জালিয়াতি করে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
শুধু পিটিআই নয়, এবারের নির্বাচন ঘিরে নিন্দা করছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও। গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নেতা পির পাগারা আরও গুরুতর অভিযোগ তোলেন। বলেন, সাধারণ নির্বাচনের ফল ইতোমধ্যে তিন মাস আগে বিক্রি হয়ে গেছে এবং অর্থও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি ইসিপি ঘুমিয়ে আছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সবাইকেই পরীক্ষা করা শেষ…সামরিক বাহিনী ছাড়া এদেশের ফেডারেশন অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’
এরপর তিনি দেশে মার্শাল ল জারি হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন। সামরিকদের এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন জামায়াতে ইসলামী করাচি প্রধান হাফিজ নাঈম। বজ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা ফলাফল মানি না…সুপ্রিমকোর্টের নোটিশ নেওয়া উচিত, ফলাফল অবৈধ ঘোষণা করা উচিত।’
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি এবং কারচুপির অভিযোগে সুপ্রিমকোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় এ নির্বাচন বাতিলের আহ্বানও জানানো হয়। সোমবার তিন বিচারপতির বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হবে।
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসা মোহাম্মদ আলী মাজহার ও মুসারাত হিলালির এই বেঞ্চের নেতৃত্ব দেবেন। পিটিশনে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) এবং ফেডারেল সরকারকে এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে।
আলি খান নামে এক নাগরিক ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। আবেদনটি ‘নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে’ বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে আবারও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে চায়।
উপরন্তু আবেদনটিতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকার গঠনের ওপর স্থগিতাদেশও চেয়েছে। তবে এরই মধ্যে পিএমএল-এন এবং পিপিপির সমন্বয় কমিটির মধ্যে বৈঠকে কেন্দ্রে সরকার গঠন চূড়ান্তের বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে পিএমএল-এন’র মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব শুক্রবার অভিযোগ তোলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পিএমএল-এন এবং পিপিপি একসঙ্গে সরকার গঠনের কথা রয়েছে।
তবে এমন ‘জোড়াতালি’র জোট সরকার গঠিত হলেও দুই বছরের বেশি তা টিকবে না। জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন মন্তব্যই করেছেন বেলুচিস্তানের ন্যাশনাল পার্টির সভাপতি সরদার আখতার মেঙ্গল। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় মেঙ্গল বলেন, ‘দুই থেকে তিন দলের সমন্বয়ে নতুন সরকার দেড় বছরের বেশি চলতে পারবে না।’
এদিকে আজ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পিটিআই। স্থানীয় সময় শনিবার বেলা ২টায় এ আন্দোলন শুরু হবে। পিটিআই নেতা হাম্মাদ আজহার কর্মীদের পাশাপাশি জনসাধারণকে সাম্প্রতিক নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে ‘ঐতিহাসিক ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য প্রস্তুত’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে আজহার বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সমাবেশ আহ্বান করা হবে। নির্বাচনি এ শোরগোলের মধ্যেই বেরিয়ে এলো ‘থলের বিড়াল’-২০২২ সালে সেনাবাহিনীর বৈঠকেই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান।
বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টিভির সাক্ষাৎকারে এ বিস্ফোরক মন্তব্য করেন জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ) প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান। সেসময় এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বৈঠক হয়।
ইসলামাবাদের আইএসআই মেস মারগাল্লা রোডে সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) কামার জাভেদ বাজওয়া এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ফয়েজ হামিদের নির্দেশে পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা পদক্ষেপ পেশ করা হয়েছিল।
বিরোধী দল হিসাবে সংসদে যাওয়ার নির্দেশ পিটিআই-এর : এদিকে কেন্দ্রীয় ও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে (সংসদে) বিরোধী দল হিসাবে যোগদানের জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন পিটিআই প্রধান ইমরান খান। এ তথ্য জানিয়েছেন পিটিআই-এর কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার সাইফ। তিনি বলেন, দলীয় প্রধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে বিরোধী দল হিসাবে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।