দুই নেতার দ্বন্দ্বে শেরপুরে উন্নয়ন হয়নি

দুই নেতার দ্বন্দ্বে শেরপুরে উন্নয়ন হয়নি

দেশজুড়ে

অক্টোবর ১০, ২০২৩ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক গত ৭ অক্টোবর (শনিবার) ‘জেলার পর্যটন, শিল্প কলকারখানার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক বৃক্তিবর্গ।

আলোচনা সভায় উঠে আসে শেরপুর জেলার উন্নয়ন বঞ্চনার কথা। জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া স্থানীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়হীনতার কারণে শেরপুর জেলার উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিশিষ্টজনরা। একই সাথে জেলার উন্নয়নে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে দুই নেতাকে এক টেবিলে বসে আলোচনার আহ্বান জানান বক্তারা। এছাড়াও শিল্প উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকাস্থ শেরপুর সদর সমিতির সভাপতি সাবেক অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ।

শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু সালেহ মো. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক মাসুদ হাসান বাদল এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু, জেলা ডায়াবেটিকস সমিতির সভাপতি শেরপুরের মাদার তেরেসাখ্যাত রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর পত্রিকার সম্পাদক ও পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লি. এর ডিরেক্টর মার্কেটিং মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির), কবি ও সাংবাদিক রফিক মজিদ, সাবেক ভিপি ও সাংবাদিক এসএম শহিদুল ইসলাম, রক্তসৈনিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল আমিন রাজ, সমাজকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক মেহেদী হাসান শামীম প্রমূখ।

দুই নেতার দ্বন্দ্বে শেরপুরে উন্নয়ন হয়নি
সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা ডায়াবেটিকস সমিতির সভাপতি শেরপুরের মাদার তেরেসাখ্যাত রাজিয়া সামাদ ডালিয়া

লিখিত বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ বলেন, মুঘল আমলে শেরপুর জেলা ছিলো একটি স্বাধীন সার্বভৌম এলাকা। দুঃখজনকভাবে শেরপুরের অনেক নামকরা ব্যক্তি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নানা দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি।

শেরপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ে পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। অথচ এখানে কক্সবাজার এলাকার মেরিন ড্রাইভের মতো শেরপুর সীমান্ত সড়কে হিল ড্রাইভ হতে পারতো। পরিকল্পিত পর্যটন উন্নয়ন হলে তা সুনাম ও সমৃদ্ধি বয়ে আনতো গোটা অঞ্চলের জন্য। শেরপুর জেলায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, মেডিক্যাল কলেজও নেই। দীর্ঘদিনের রেললাইনের দাবিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও হলো না এখনো। অথচ বৃটিশ আমল থেকেই এই জেলাটি খাদ্য উদ্ধৃত্ত। এখানকার উৎপাদিত চাল দেশের উল্লেখযোগ্য চাহিদা মেটায়।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেরপুর জেলা প্রকৃতি, শিল্প কলকারখানা, অর্থনীতি এবং দক্ষ জনশক্তিতে সমৃদ্ধ থাকা সত্ত্বেও সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট গভর্নেন্স বাস্তবায়ন করা গেলে শেরপুর জেলায় খুব দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা আমাদের চাহিদা সরকারের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। কিছু কিছু প্রশাসনিক ভৌত অবকাঠামো গড়ে ওঠা ছাড়া মূলত স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট জনশক্তি তৈরি করার মতো কোনো কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশের সব চাইতে বড় পাহাড় সমৃদ্ধ জেলা হলেও এ জেলায় পর্যটন শিল্প উন্নয়নে কিছুই হয়নি। পর্যটনের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কোনো প্রচার কার্যক্রমও পরিচালনা করা হচ্ছে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, শেরপুর জেলা পরিচয় হতে পারতো মতিয়া চৌধুরীর জেলা কিংবা আতিউর রহমানের নামে। কিন্তু এটি যে একটি জেলা, এটাই অনেকে জানে না। বড় দুই নেতার দ্বন্দ্বে এবং সমন্বয় না থাকার কারণেই শেরপুর জেলার উন্নয়ন হয়নি।

শেরপুর জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া বলেন, পর্যটন এলাকার সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শেরপুর জেলায় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি জন্মেছিল, কিন্তু তাদের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। ত্যাগী ব্যক্তিদের আমরা স্মরণ করি না বলেই আমরা আজ উন্নয়ন থেকে অনেক পিছিয়ে।

শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি শহীদুল ইসলাম বলেন, শেরপুর জেলার মানুষের চাহিদার অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য নেই কোনো মেডিকেল কলেজ। তাই সবার আগে শেরপুর জেলায় সদরে একটি মেডিকেল কলেজ অত্যন্ত জরুরি।

দুই নেতার দ্বন্দ্বে শেরপুরে উন্নয়ন হয়নি

সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও শীর্ষ খবর সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) বলেন, সত্যিকার অর্থে শেরপুর জেলায় বড় বড় নেতা হওয়ার কারণে শেরপুর এত পিছিয়ে। তাদের স্থলে ছোট নেতা থাকলে এতদিন অনেক উন্নয়ন হতো। আমরা এসব বড় নেতাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দিতে চাই। এখনো তাদের সুযোগ আছে। তারা উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে দেখাক।

সভাপতির বক্তব্যে শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু সালেহ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ১৯৫৭ সালে শেরপুর সদরে এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট এর মূল জমির পরিমাণ ৪৩ একর যার অর্ধেক এখনো অব্যবহৃত পড়ে আছে। এই জায়গায় সরকার চাইলেই দুই-দুটি বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তুলতে পারে।

উন্নয়ন বঞ্চনা ও পরিচয়ে স্বাতন্ত্রহীনতায় আক্ষেপ করে বক্তারা দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামাজিক-নাগরিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *