ঘুষে মিলছে বনের জমি, উঠছে দালান, নির্বিকার প্রশাসন

ঘুষে মিলছে বনের জমি, উঠছে দালান, নির্বিকার প্রশাসন

দেশজুড়ে

অক্টোবর ১৬, ২০২৩ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

সাইদুজ্জামান সাঈদ, রামু (কক্সবাজার)।।

বনবিভাগের জমিতে সামাজিক বনায়ন ছাড়া কোনো কিছুই করার বিধান নেই। তবুও রামু উপজেলার বেশিরভাগ সংরক্ষিত বনভূমির জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিলছে। আর সেই জমিতে আধা-পাকা ঘর বা দালান করতে বন বিভাগের বিট কর্মকর্তাকে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এ কারণে ওই উপজেলায় দিন দিন বন বিভাগের জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনের গাছ কেটে জমি দখল নিয়ে গড়ে তুলছেন ঘর-বাড়ি। সরেজমিনে দেখা যায়, রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৪ ও ৭নং ওয়ার্ডের হাইস্কুল পাড়া, ঘোনা পাড়ার, বালুবাসা,পূর্ব হাজির পাড়া এ সমস্ত গ্রামে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। চারিদিকে বড় বড় পাহাড়ের টিলা আর সারি সারি গাছ এবং তার ভেতরে নতুন নতুন ঘর-বাড়ি। শতশত নতুন নতুন টিনের ঘর আর দালানে ভরে গেছে পুরো বনভূমির জায়গা। দেখলেই মনে হয় এ যেন নতুন একটি গ্রাম! না, এটি কোন গ্রাম নয়।

এটি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে জমিগুলো সামাজিক বনায়নের নামে দখলে নিয়ে সেখানে নির্মাণ করছেন বড়বড় দালান ও আধাপাকা ঘরবাড়ি। এতে করে সামাজিক বনায়নের নাম করে দিন দিন দখল হয়ে যাচ্ছে শতশত একর বনভূমি। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৪ ও ৭নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় বনের ভেতর চোখ যেতেই দেখা যায় নির্মাণাধীন ইটের দালান তৈরি পাকা ভবন। বাড়িটির পুরো কাজ সম্পন্ন হলেও বাকি রয়েছে শুধু ছাঁদ ঢালাইয়ের কাজ। পাহাড়ের উপর সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন পাকা ভবনের অপর পাশে রয়েছে মাটির ঘরসহ একাধিক আধা পাকা ও টিনের ঘর। বাড়িতে অপরিচিত লোক এসেছেন দেখে এগিয়ে আসেন এক নারী। বাড়িটি কার জিজ্ঞেস করলেই উত্তরে তিনি জানান, বাড়িটি তার ছেলে নুরুল কবিরে বাড়ি । তার পিতার নাম মৃত বদরুজ্জামান। বন বিভাগের জায়গায় ঘর তুলেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বিট কর্মকর্তাকে বলে বাড়ি নিমার্ণ করতেছি। তাই এই জমিটি বাঁকখালী রেঞ্জের অধীনে কচ্ছপিয়া বনবিট কর্মকর্তা ও বনকর্মীদের ম্যানেজ করে নেওয়া হয়েছে। তা না হলেতো ঘর তুলতে দেয় না। এসময় সাংবাদিকরা বনবিভাগের জায়গাতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করার এখতিয়ার না থাকা স্বত্ত্বেও কেন বনবিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করছেন।

এমন প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের কর্কশ কণ্ঠে বলেন, এ এলাকাতে পাকা, আধা পাকা ও টিনের অন্তত ৫০/১০০টির অধিক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এসময়তো এমন কোন প্রশ্ন আসেনি আমার বেলায় কেন এতো প্রশ্ন এবং এতো আইন? আমি আপনাদের এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না। আমি বনবিভাগকে ম্যানেজ করেই বাড়ি নির্মাণ করতেছি। তাই এখানে এতো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তিনি এসময় আরো বলেন, আমার বেলায় যদি এতো প্রশ্ন এবং আইনের প্রসঙ্গ আসে তাহলে অন্যদের বেলায় কেন তা নয়? এমন আইন যদি থেকে থাকে তাহলে সবার জন্য তা সমান হতে হবে। অন্যদিকে তার এমন কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকরা সরেজমিন এলাকাটি ঘুরে দেখতে পায়, বনবিভাগের জমি দখল করে তার কথা মতো ৫০/১০০টির অধিক পাকা, আধা পাকা ও টিনের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এবং এসব বাড়ি নির্মাণ করতে কাটা হয়েছে পাহাড়ের টিলা ও বনজ এবং ফলজ গাছপালা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে এভাবেই সরকারি জমি প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। আবার সেখানে ঘর-বাড়ি নির্মাণও করছেন। এভাবে চলতে থাকলে পুরো বন উজাড় হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কচ্ছপিয়া বনবিট কর্মকর্তা হারুন রশিদ বেপারি এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি হাইস্কুল পাড়াতে যে তিন বাড়ি নিমার্ণে কথা বলেছে ধরে নিতে পারেন সবাইকে মামলা দিয়েছি। তিনি আরো জানান আমি ১৫ দিনের মধ্য বদলী হয়ে যাবো। আপনারা সাংবাদিকরা কি করেন তখন দেখবো। তার কোন বনকর্মী টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে বনবিভাগের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এই ব্যাপারে বাঁকখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা সরওয়ার জাহান সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আপনি একটু বিট অফিসারে সাথে কথা বলেন। আমি বিষয় টা দেখছি বলে ফোন কেটে দেন।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগে সহকারী বন সংরক্ষক প্রান্তোষ চন্দ্র রায় সাথে মুটোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,রেঞ্জ কর্মকর্তার কথা মতো আপনি বিট অফিসারকে বিষয় টা কথা বলেন। আমি বিট কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি বিষয় টা দেখতে। বনভূমিতে কোন প্রকার ইটের দালান তৈরি করা যাবে না। আমি বিষয় সর্ম্পকে খু্ঁজ নিচ্ছি অতি দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *