গ্রিসে ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’, ক্ষমতাসীনদের জয়

গ্রিসে ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’, ক্ষমতাসীনদের জয়

আন্তর্জাতিক

মে ২৩, ২০২৩ ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

গ্রিস নির্বাচনে রীতিমতো তাক লাগিয়েছে ক্ষমতাসীন পার্টি ‘দ্য নিউ ডেমোক্রেটিক’। ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হয়ে শোরগোল বাধিয়েছে গ্রিসের অলিগলিতে। জয়ের পুনরাবৃত্তিকে ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’ হিসাবে দেখছে বিজয়ী নেতা প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস। ভরাডুবি হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থি সিরিজা পার্টির।

রোববার দেশটির জাতীয় নির্বাচন শেষে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ‘নিউ ডেমোক্রেটিক’ পার্টির ঝুলিতে ৪১ শতাংশ ভোটার সমর্থন দিলেও সিরিজা পার্টির ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ২০ শতাংশ ভোট। বিজয়ী ভাষণে মিৎসোটাকিস বলেন, ‘জনগণ চেয়েছিল গ্রিস একটি একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার দ্বারা পরিচালিত হোক এবং নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি  অন্যের সাহায্য ছাড়াই পরিচালিত হতে পারে।’

গ্রিস পার্লামেন্টে সরকার গঠনের জন্য ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫১ আসনের প্রয়োজন। বিজয়ী দল ঘরে এসেছে ১৪৬টি ভোট। অর্থাৎ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় থাকতে আরও ৬টি আসনের প্রয়োজন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে পার্টিপ্রধানকে জোট সরকার তৈরি করতে হবে অথবা নতুন নির্বাচন চাইতে হবে।

গ্রিসের নির্বাচনের নিয়মানুযায়ী, প্রথম নির্বাচনে জয়ী দল দ্বিতীয় নির্বাচনে অতিরিক্ত আসন পেতে পারে। মিৎসোটাকিসের নজর এখন সেদিকেই। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একক অবস্থান টিকিয়ে রাখতে দ্বিতীয়বার নির্বাচনেরই সংকেত জয়ী দলের। সম্পূর্ণ আসনসংখ্যা নিশ্চিত করে নিজের পছন্দমতো মন্ত্রিসভা দিয়ে চার ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা। চার বছর আগেও ৪১ শতাংশ ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যথেষ্ট ছিল। তবে কালের ধারায় নিয়ম বদলেছে। এখন সরকার গঠনে ৪৫ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন কেননা বিজয়ী দল প্রথম রাউন্ডে ৫০টি আসন বোনাস পাওয়া অসমীচীন।

মিৎসোটাকিস জোট গঠনে যেতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক পার্টি পাসোক সম্ভাব্য অংশীদার হবেন। ১১.৫ শতাংশ ভোট নিয়ে নির্বাচনে জয়ীদের একজন তিনি। তবে জোট গঠনের এ পথ মোটেও সহজ হবে না কেননা গত বছর পার্টি নেতা নিকোস অ্যান্দ্রোলাকিস ওয়ারট্যাপ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল। সেই সময়ে মিৎসোটাকিসের এক ভাগনে প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ ও গোয়েন্দা হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। এ কেলেঙ্কারি তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। অন্যদিকে অপ্রত্যাশিত এ ফলাফলে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে সিরিয়াজার নেতা এলেক্সিস সিপ্রাস। অসন্তোষ প্রকাশ করে নিজ দলকে তিনি ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’ বলে দাবি করেন। ২০১৫ সালে বেলআউট কঠোরতার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন কিন্তু অবশেষে ঋণদাতাদের দাবিতে সম্মত হন। যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী জয়ী দলকে অভিনন্দন জানাতে ভুলেননি পার্টিনেতা সিপ্রাস।

‘নিউ ডেমোক্রেটিক’ পার্টিপ্রধান মিৎসোটাকিস শক্তিশালী রাজবংশের একজন। তার বাবা কন্সটান্টিনোস মিৎসোটাকিস ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বোন ডোরা ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ছেলে কোসটাস বাকোয়ানিস এথেন্সের বর্তমান মেয়র। চার বছর ক্ষমতায় থাকা মিৎসোটাকিস গ্রিসের পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করেছিল। বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৫৭ জনের মৃত্যুতেও তার সরকারকে দায়ী করা হয়। এটা ছিল গ্রিসে অন্যতম রেল বিপর্যয়ের একটি। দুর্ঘটনা বা ওয়ারট্যাপ কেলেঙ্কারি রক্ষণশীলদের সমর্থনকে ক্ষুন্ন করেছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং ভোটের আগে জনমত জরিপের পূর্বাভাসের চেয়ে বিপুল পরিমাণ ভোটে জয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *