বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত ‘মোখা’ ঘণ্টায় আট কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা মোখার কেন্দ্র ও প্রান্ত মিলিয়ে ব্যাসার্ধ ধীরে ধীরে বাড়ছে। সন্ধ্যার দিকে এর গতি বেড়ে ১১০ কিলোমিটার হয়। আজ ভোর ৬টার পর মোখা ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোববার সন্ধ্যার পর এটি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। উপকূলে আঘাত হানার সময়ে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটার হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোয় ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি গভীর সমুদ্রবন্দরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) মোখার প্রতি সতর্ক নজর রাখছে। বৃহস্পতিবার সকালে বিএমডির জারি করা ৬ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়-ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৯৫ কিমি. দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের টানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়।
সারা দেশে দাবদাহ চলছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় ২ দিন ছিল রেকর্ড সৃষ্টিকারী তাপমাত্রা। বুধ ও বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা আগের ৪ দিনের তুলনায় কম থাকলেও জলীয় বাষ্পের ঘাটতি আর পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে ব্যাপক গরম অনুভূত হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাঙ্গামাটিতে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি। যা আগের দিন ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হতে পারে। তবে দাবদাহ তেমন একটা কমবে না। এজন্য রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
বিএমডি পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকমুখী ছিল। তবে শুক্রবার প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর এর দিক উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে ঘুরতে শুরু করবে। এরপর এটি আরও শক্তি সঞ্চয় করে ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে উপকূলে আঘাত হানার আগে কিছুটা দুর্বল হতে পারে। যদিও সুনির্দিষ্ট করে এখনই বলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন মডেল অনুযায়ী-শনিবার সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। আর রোববার দুপুরের দিকে মোখার মূল চোখ বা কেন্দ্র উঠতে পারে স্থলভাগে। এর অর্ধেক অংশ বাংলাদেশের ওপরে বাকিটা মিয়ানমারের উপকূলে থাকতে পারে। ঝড়ের কেন্দ্র বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের কাউকপুর উপকূলে অতিক্রম করতে পারে। এ সময় ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে। তবে শনিবার মোখার শক্তি থাকবে সবচেয়ে বেশি। ‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিমি. থাকতে পারে। তবে রোববার সকাল থেকে ধীরে ধীরে শক্তি কমতে শুরু করতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি থেকে জানমাল রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা, জনগণকে সতর্ক করা, আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং খাবারের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আজ ও কাল খোলা রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মাঠে থাকা পাকা ধান কেটে ফেলা এবং অন্য শস্য ঘরে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। তবে বরাবরের মতোই উপকূলীয় জেলাগুলোতে বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। ঝড়ের সঙ্গে আসা উঁচু ঢেউ বেড়িবাঁধ টপকে বা ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে যেতে পারে।