অক্টোবর ২৩, ২০২২ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ
বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন শ্রীলংকার আইনপ্রণেতারা।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দেশটির পার্লামেন্টে একটি বিল পাস হয়েছে। ফলে আইনপ্রণেতারা সংবিধান সংশোধন করবেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমিয়ে আনবেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলংকা গত জুলাইয়ে সরকারবিরোধী তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক সংকটের জেরে খাবার ও জ্বালানিসংকটে ফুঁসে ওঠে দেশটির মানুষ।
বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি ছিল, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানো। সংবিধান সংশোধনে আইনপ্রণেতাদের এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভকারীদের দাবি মানার প্রক্রিয়া শুরু হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তুমুল গণ-আন্দোলনের মুখে জুলাইয়ে পতন ঘটে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন তিনি। পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরলেও নিভৃতে জীবন কাটাচ্ছেন গোতাবায়া। তার পদত্যাগের পর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট হন রনিল বিক্রমাসিংহে। এর আগে বিভিন্ন সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।
তবে সমালোচকদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় রনিলের সরকারে গোতাবায়ার প্রভাব রয়েছে। মূলত এ কারণে শ্রীলংকার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাবশালী রাজাপক্ষে পরিবারের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা রনিলের জন্য কঠিন হবে।
এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর উদ্যোগ শ্রীলংকার রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশটিতে সংবিধান সংশোধনের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পুলিশ, বিচার বিভাগ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ কমে আসবে।
এ ছাড়া সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তির শ্রীলংকার সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ রুদ্ধ হবে। আগেও দেশটিতে এমন নিয়ম চালু ছিল। তবে দুই বছর আগে এ নিয়ম বদলে দিয়ে দ্বৈত নাগরিকদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এর মধ্য দিয়ে তিনি তার ছোট ভাই বাসিল রাজাপক্ষেকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনেন। পরে বাসিলকে তার সরকারের অর্থমন্ত্রী করেন। বাসিল যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। শ্রীলংকার এখনকার অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে অর্থমন্ত্রী বাসিলকে দায়ী করেন অনেকেই।
আইনপ্রণেতাদের উদ্যোগের বিষয়ে শ্রীলংকার বর্তমান বিরোধী দলের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা শনিবার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় নিলে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জনহিতকর একটি বিল। তাই আমরা এই বিলে সমর্থন দিয়েছি।’
তবে বিরোধীদের মতে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যাপক হারে কমানোর দাবি তুলেছিলেন। তাই সংবিধান সংশোধন করে শুধু নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর এ উদ্যোগে কাজের কাজ হবে না। এটা সীমিত একটি উদ্যোগমাত্র। আর অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এ বিষয়ে বিল পাসের আগে পার্লামেন্টে বিতর্কের সময় আইনপ্রণেতা এম এ সুমান্থিরান বলেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে