আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি, এবার সিদ্ধান্ত নেব: মমতা

আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি, এবার সিদ্ধান্ত নেব: মমতা

আন্তর্জাতিক

জুলাই ৩১, ২০২৪ ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও ফারাক্কা বাঁধ চুক্তির পুনর্নবায়ন নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দৃশ্যত পানিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার তথ্যানুযায়ী, সোমবার বিধানসভায় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনার ঘটনায় আবারো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

বিধানসভায় তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর ও চুক্তি পুনর্নবায়ন করা হচ্ছে। আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি, কিন্তু আমি বাংলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেব। বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে এসব কথা বলেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ফারাক্কা চুক্তি আবার পুনর্নবায়ন করেছে। তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি সরকার। এই সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে সতর্কবার্তা দেওয়া যায়। কিছুই করা হয়নি। ২০২৬ সালে ফরাক্কা চুক্তি পুনর্নবায়ন হবে। ২০২৪ সালেই ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে কমিটি। যে কমিটি পাঠানো হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রের ৯ জন এবং রাজ্যের একজন প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে।

তিস্তা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, সিকিম ১৪টি হাইড্রোপাওয়ার করে তিস্তার পানি অনেকটাই নিয়ে নিয়েছে। প্রতি বছর দার্জিলিং, কালিম্পং জলে ভেসে যায়। তিস্তা বন্ধ করে দিলে তো উত্তরবঙ্গ পানীয় জল, সেচের জল পাবে না।

তিনি বলেছেন, ফারাক্কা ব্যারেজ কমিউনিটি মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নির্ভরশীল। আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি। কিন্তু আমি বাংলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ, এখানকার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কেন্দ্র অগ্রিম চুক্তি করে দিচ্ছে। বাংলা কোনও আলোচনায় থাকতে পারছে না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বন্যা হলে মালদহে ভাঙন হচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। রতুয়া, কালিয়াচকে ভাঙন বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে এই চুক্তি করার সময় জ্যোতি বসুর সঙ্গে আলোচনা করেছিল কেন্দ্র সরকার। পরে তাকে বাংলাদেশ সংবর্ধনাও দেয়। কিন্তু এবার বাংলাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজের পাড় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আগে পালন করুক কেন্দ্র। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করুক।

বাংলাদেশ-ভুটানের নদী প্রসঙ্গ তুলে মমতা বলেন, ভুটানের ছাড়া পানিতে প্রতি বছর উত্তরবঙ্গের ক্ষতি হয়। বাংলাকে না জানিয়েই কেন্দ্র তাতে সম্মতি দিয়ে দেয়। এবার ভারত-বাংলাদেশ নদী কমিশনের আদলে ভারত-ভুটান নদী কমিশন গড়ে তোলার কথা বলেন মমতা। নীতি আয়োগের বৈঠকেও সেই প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

মমতা বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের বৈঠকে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে আমি বিশদে কথা বলে এসেছি। বাংলা হল নৌকার মতো। সব পানি আমাদের রাজ্যে এসে পড়ে। আমাদের ভুগতে হয়। বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রেকর্ড করে এসেছি।’’

পানি নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব কেন্দ্রকে জানাতে বিধানসভার কমিটি যাবে সেচ মন্ত্রণালয়ে। মমতার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর বিধানসভার স্পিকার বলেন, পরিষদের মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটি গঠন করা হবে। বিধানসভায় যা আলোচনা হল, তার কপি দলের সাংসদদের কাছেও পাঠিয়ে দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রাজ্যসভা এবং লোকসভা থেকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল পানি-সমস্যা নিয়ে দিল্লিতে যাবে।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *