অবসর নিতে পারছেন না চীনের বয়স্করা

অবসর নিতে পারছেন না চীনের বয়স্করা

আন্তর্জাতিক

মে ১১, ২০২৪ ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

হু ডেক্সি। বয়স ষাটোর্ধ্ব পেরিয়ে গেছে। আগের থেকে হাঁটার শক্তিও কমে গেছে অনেকটা। তবুও প্রতিদিন এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হাঁটতে হয় তাকে। ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে যেতে হয় দূরের শপিংমলে। করতে হয় পরিচ্ছন্নতার কাজ। ৬৭ বছর বয়সে যেখানে তার বিশ্রাম নেওয়ার কথা, সেখানে জীবিকার তাগিদে লড়াইটা এখনো চালিয়েই যেতে হচ্ছে।

চীনে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় শহুরে জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না হুর মতো অনেকেই। উপায় না পেয়ে গ্রামে ফিরে আবারও ছুটতে হয় টাকা উপার্জনের পথে। মন্থরগতিতে চলা অর্থনীতির দেশটিতে পেনশন ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জীবন বাঁচাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই আয়ের খোঁজে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন চীনের বয়স্ক ব্যক্তিরা। বয়স বেড়ে গেলেও কাজ থেকে অবসর নিতে পারছেন না তারা। রয়টার্স।

তিন দশক আগে, চীনের জিয়ান শহরের রাস্তায় নিজেদের তৈরি রুটি বিক্রি করতেন হু এবং তার স্ত্রী। শহরের ব্যয়বহুল জীবনের সঙ্গে খাপ খাইতে না পেরে চলে আসেন বেইজিংয়ের প্রান্তের একটি গ্রামে। সেখান থেকে কিছু দূরের একটি শপিংমলে কাজ করছেন দুজনই। ক্লিনার হিসাবে ১৩ ঘণ্টা কাজ করে প্রতিমাসে প্রত্যেকে ৪ হাজার ইউয়ান (৫৫২ ডলার) উপার্জন করেন তরা। হু বলেছেন, আমি আমার দুই সন্তানের বোঝা হতে চাই না এবং আমাদের দেশও আমাদের একটি পয়সাও দেয় না। এজন্য আমি এখনো কাজ করছি।

৬০ বছর বয়সি ইয়াং চেংরং এবং তার ৫৮ বছর বয়সি স্বামী উ ইয়ংহো বেইজিংয়ের একটি রিসাইক্লিং স্টেশনের জন্য কার্ডবোর্ড এবং প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তাদের দিন কাটাচ্ছেন। প্রতি কিলোগ্রামে এক ইউয়ানেরও কম উপার্জন করেন তারা। ইয়াং বলেছেন, আমার হার্টের সমস্যা রয়েছে। আমরা দুজনই অর্থ উপার্জন করলেও চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারি না।

রয়টার্স চীনের গ্রামীণ অভিবাসী শ্রমিক, জনসংখ্যাবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং একজন সরকারি উপদেষ্টাসহ একডজনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। যারা একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাগত সংকটের জন্য অযোগ্য বর্ণনা করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ক্রমবর্ধমান সংখ্যার বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহেও হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ বিজ্ঞানী এবং জনসংখ্যাবিদ ফুক্সিয়ান ই বলেছেন, চীনের প্রবীণরা দীর্ঘ এবং দুঃখজনক জীবনযাপন করছেন। অনেক বেশি সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক গ্রামাঞ্চলের দিকে ফিরে আসছেন। কেউ কেউ কম বেতনের চাকরি নিচ্ছেন। নিজেদের বাঁচানোর জন্য কষ্ট হলেও আয়ের পথ খুঁজ নিচ্ছেন তারা।

চীনে পেনশন ব্যবস্থা হুকু নামে পরিচিত একটি অভ্যন্তরীণ পাসপোর্ট সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যা জনসংখ্যাকে শহুরে ও গ্রামীণ লাইনে বিভক্ত করে। বেইজিং এবং সাংহাইয়ে মাসিক পেনশন ৬ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত হলেও কম-উন্নত প্রদেশগুলো এর পরিমাণ অনেকটা কম। প্রায় ৩ হাজার ইউয়ান। ২০০৯ সাল থেকে দেশব্যাপী গ্রামীণ পেনশন চালু করা হলেও তা খুবই সামান্য। এজন্য কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন বয়স্করা। এদিকে ফুরিয়েও যেতে বসেছে পেনশন তহবিল। চীনের একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেস (সিএএসএস) অনুমান করেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে পেনশন ব্যবস্থার অর্থ শেষ হয়ে যাবে।

চীনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে প্রায় ৯৪ মিলিয়ন কর্মক্ষম মানুষ (চীনের ৭৩৪ মিলিয়ন শ্রমশক্তির প্রায় ১২ দশমিক ৮ শতাংশ) ৬০ বছরের বেশি বয়সি ছিল, যা ২০২০ সালে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। এই ভাগ ধনী দেশ জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় কম হলেও আসন্ন দশকে আকাশচুম্বী হতে চলেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপদেষ্টা বলেছেন, এ সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে যদি আমরা প্রথমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সমস্যাটি সমাধান করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *