হানিয়াকে হত্যা করতে ইরানি এজেন্ট ভাড়া করেছিল মোসাদ

হানিয়াকে হত্যা করতে ইরানি এজেন্ট ভাড়া করেছিল মোসাদ

আন্তর্জাতিক

আগস্ট ৪, ২০২৪ ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ইরানের তেহরানে গত বুধবার (মঙ্গলবার দিবাগত রাতে) হামলায় নিহত হন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া। এ হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হামাস। এরইমধ্যে হানিয়া হত্যার জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের খানানি বলেছেন, হানিয়ার রক্ত কখনোই বৃথা যাবে না। এমতাবস্থায় ইরানের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিগ্রাফকে জানিয়েছে, হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করতে ইরানি এজেন্ট ভাড়া করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তারাই হানিয়া যে বাসভবনে ছিলেন সেখানকার তিনটি কামরায় বোমা পেতে রেখেছিল।

জানা গেছে, ইসমাইল হানিয়াকে আরো মাস কয়েক আগে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। চলতি বছরের মে মাসে যখন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মারা যান, তখন হানিয়া তার জানাজায় যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন, সে সময়ই তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল।

ইরানের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিগ্রাফকে এ বিষয়ে বলেছেন, ইব্রাহিম রাইসির জানাজার সময় ব্যাপক ভিড় থাকায় এবং সে সময় হানিয়া যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানে ব্যাপক লোকসমাগম থাকায় তাকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। তার বদলে এরপর যখন হানিয়া তেহরান সফরে যাবেন, সে সময় তিনি কোথায় অবস্থান করতে পারেন, সেই অনুমানের ওপর নির্ভর করে তিনটি কামরায় মোসাদের এজেন্টরা বোমা পেতে রেখেছিল।

ইসমাইল হানিয়ে যে ভবনে ছিলেন, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বোমা রাখার জন্য মোসাদের এজেন্টরা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি কামরায় প্রবেশ করেন। এ সময় তারা তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন।

ওই কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, এর পরপরই মোসাদ এজেন্টরা ইরান ছেড়ে চলে যান। তবে তার পরও তাদের বেশ কয়েকজন ইরানে রয়ে গিয়েছিলেন এবং তাদেরই কেউ কেউ হয়তো হানিয়ার বাসভবনে রাখা বোমা বাইরে থেকে বিস্ফোরণ ঘটান। এই বিস্ফোরণে হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষী মারা যান। হানিয়া ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন।

হানিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা এখন নিশ্চিত, মোসাদ আনসার আল-মাহদি ইউনিট সুরক্ষা ইউনিট থেকেই তাদের এজেন্ট ভাড়া করেছিল। এই ইউনিটিই হানিয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেছেন, আমরা অধিকতর তদন্তে জানতে পেরেছি যে, হানিয়ার কামরা ছাড়াও তারা আরও দুটি কামরায় বোমা পেতেছিলেন। আইআরজিসির অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, উচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেদ করা ইরানের জন্য অনেক বেশি অপমানের। তিনি বলেন, এটি এখনো সবার প্রশ্ন যে, কীভাবে এ ঘটনা ঘটতে পারল। আমি এখনো বিষয়টি বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘উচ্চপর্যায়ে হয়তো এমন একটা কিছু হয়েছে, যা আমরা জানি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইআরজিসির প্রথম সূত্রটি বলেছেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইআরজিসিতে দোষারোপের খেলা চলছে। আইআরজিসি কমান্ডার ইসমাইল কানি তার বাহিনী থেকে লোকজনকে বহিষ্কার করছেন, গ্রেফতার করছেন এবং এমনকি কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *