রাজস্ব আদায়ে ৫ চ্যালেঞ্জ

রাজস্ব আদায়ে ৫ চ্যালেঞ্জ

অর্থনীতি স্লাইড

জুলাই ২৭, ২০২৪ ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে ২১ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁটের পরও অর্জিত হয়নি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে বড় অঙ্ক আয়ের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছরের। এ লক্ষ্যমাত্রা কতটা অর্জিত হবে, তা অর্থবছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। তবে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে উচ্চ লক্ষ্যসহ ৫ সমস্যা চিহ্নিত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এসবের মধ্যে আছে কর সম্প্রসারণে জরিপ কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা ও পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা এবং কর ব্যবস্থাপনার তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা। এছাড়া রয়েছে দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাব।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘কর্মসম্পাদন’ প্রতিবেদনে এসব সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়, সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অটোমেশন বাস্তবায়ন করাই মূল চ্যালেঞ্জ।

উল্লিখিত সব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত কয়েকদিনের ঘটনা। কারণ, এর ফলে গত সাতদিন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ হয়নি। অর্থ বিভাগের হিসাবে দৈনিক ১৩৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থবছরের শুরুতে এ ধরনের নেতিবাচক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে কর জিডিপির অনুপাত ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এটি গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ১০ শতাংশে আছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।

জানতে চাইলে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, উল্লিখিত সমস্যার বাইরে আরও একটি বড় সমস্যা আছে। সেটি হচ্ছে কর সম্প্রসারণে কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। সেটি করতে না পারলে করদাতা সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ হবে না। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, বৃহত্তম করদাতাদের মধ্যে একজনের দেওয়ার কথা এক হাজার কোটি টাকার কর; কিন্তু তিনি দিচ্ছেন একশ কোটি টাকা। এসব জায়গায় হাত দেওয়াসহ সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আরও একটি সমস্যা, যেটি আন্দোলনের কারণে ঘটছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতগুলোয় ধাক্কা আসবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজস্ব আহরণের ওপর।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে আয় বাড়াতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে প্রায় ৫৫ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট আদায় বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হবে ৪২ হাজার ইএফডি মেশিন। বর্তমানে ২৭ হাজার ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ মেশিন স্থাপনের ফলে ভ্যাট খাতে আদায় আগের তুলনায় বেড়েছে। পুরোপুরি মেশিনের আওতায় আনা গেলে আদায়ের হার আরও বাড়বে। এছাড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৬২০ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৬ হাজার ৬৫৭ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৭৫ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরে ই-পেমেন্ট আদায় হার কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭২ হাজার ১৫২ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসাবে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত হিসাবে প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ০৫ শতাংশ হারে কর বাড়াতে বলা হয়েছে। সে হিসাবে প্রতিবছরই কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সরকারকে বাড়াতে হবে। তবে সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশোধিত রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। গত মে পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ অনুযায়ী মে মাস শেষে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ছিল গোটা অর্থবছরের মোট আহরণ লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা বা এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, বৈশ্বিক সংকট ও গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার বিরূপ প্রভাব পড়ছে রাজস্ব খাতে। এমনিতে ডলার সংকটে এলসি খোলার জটিলতায় পণ্য আমদানি খাত সংকুচিত হয়েছে। অপরদিকে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলছে রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর। অবরোধসহ নানা কর্মসূচির কারণে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। ফলে এসব খাত থেকে কমেছে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজস্ব আদায়। যে কারণে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ কমেছে।

অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে আগামী দিনগুলোয় রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর সেবা উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে আয়কর, ভ্যাট ও সঞ্চয়পত্র অফিসের সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *