যে মামলায় খালাস পেলেন ইমরান খান ও মাহমুদ কুরেশি

যে মামলায় খালাস পেলেন ইমরান খান ও মাহমুদ কুরেশি

আন্তর্জাতিক

জুন ৪, ২০২৪ ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

সাইফার মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। সোমবার ইসলামাবাদের হাইকোর্ট (আইএইচসি) এক রায়ে আলোচিত এই মামলা থেকে দু’জনকে মুক্তি দিয়েছেন।

সোমবার প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক ও বিচারপতি মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় ইসলামাবাদ হাইকোর্টে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ইমরান খানের বোন এবং শাহ মাহমুদ কুরেশির স্ত্রী ও কন্যারাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এই মামলায় গত ৩০ জানুয়ারি ইমরান খান এবং শাহ মাহমুদ কুরেশি গত ৩০ জানুয়ারি ১০ বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। পরে ওই রায় বাতিল চেয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন পিটিআইয়ের আইনজীবীরা।

সোমবার সেই আবেদনের ওপর শুনানি ছিল। শুনানি শেষে সংক্ষিপ্ত এক রায়ে ইমরান-কুরেশিকে মামলা থেকে মুক্তি দেন আইএসইচসির বিচারপতি আমির ফারুক এবং বিচারপতি মিয়াঙ্গুল হাসান আওরঙ্গজেবের সম্মিলিত বেঞ্চ।

রায়ের পর পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর বলেন, পাকিস্তান ও পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষের জন্য আজ একটি খুশির দিন।

তিনি বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভিত্তিহীন মামলার অবসান হয়েছে।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা সাইফার মামলা মূলত গোপন এক কূটনৈতিক নথি বা তারবার্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাজিদ ইসলামাবাদে ইমরান খানের সরকারের কাছে একটি গোপন নথি পাঠিয়েছিলেন। আর সেই নথির বিষয়বস্তু প্রকাশ্যে এনেছিলেন পিটিআইয়ের এ প্রতিষ্ঠাতা।

নথিতে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির প্রমাণ আছে বলে দাবি করে পিটিআই। ইমরান খান রাষ্ট্রীয় গোপনীয় এই নথি নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং এর বিষয়ব্স্তু জনসম্মুখে তুলে ধরেছিলেন।

পাকিস্তানে এই বিতর্কের শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ; ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র এক মাস আগে। এক জনসমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সামনে একটি চিঠি প্রদর্শন করেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, একটি দেশের কাছ থেকে আসা সাইফার এটি।

পিটিআইয়ের সরকারকে উৎখাত করার জন্য ইমরান খানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে সেই দেশটি; যার প্রমাণ চিঠিতে আছে।

তিনি চিঠির বিষয়বস্তু খোলামেলাভাবে প্রকাশ করেননি বা এটি কোন দেশ থেকে এসেছে তা প্রকাশ করেননি। যদিও তার বক্তৃতায় চিঠির বিষয়বস্তুর ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়।

কিন্তু এপ্রিলের ১০ তারিখ বিরোধী এমপিদের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েকদিন পর এক জনসভায় ইমরান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের প্রধান ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে সেই দেশের পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের একটি বৈঠক হয়েছিল এবং সেই বৈঠকে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।

ইমরানের ভাষ্যমতে, লু বলেছিলেন— ইমরান খানকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) চেয়ারম্যান নওয়াজ শরিফসহ দলের অন্যান্য জেষ্ঠ্য নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অপরাধ আদালতে বিচারধীন রয়েছে, সেগুলো মিটিয়ে দেওয়া হবে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করায় ব্যাপারটি সেখানেই থেমে গিয়েছিল।

ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন পিএমএলএনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং নওয়াজ শরিফের ছোটভাই শাহবাজ শরিফ। তিনিও দীর্ঘ সময় ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দেননি।

কিন্তু ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় চলতি বছর সেপ্টেম্বরে, ইমরান খান, পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং সেক্রেটারি জেনারেল আসাদ ওমরের দু’টি অডিও টেপ ফাঁসের পর। সেই অডিও টেপে এই তিনজনকে এই মর্মে আলোচনা করতে শোনা যায় যে, ওই চিঠিটি থেকে পিটিআই কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে।

তারপর ৩০ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা বিষয়টি তদন্তে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এফআইএ) নির্দেশ দেয়। গত অক্টোবরে ইমরান ও কুরেশিকে অপরাধী সাব্যস্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয় এফআইএ।

সেই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই মাসেই এফআইএকে বিশেষ আদালতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দেয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা।

মামলা দায়েরের তিন মাস পর ৩০ জানুয়ারি ইমরান ও কুরেশিকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছর কারাবাসের সাজা দেন নিম্ন আদালত, যা আজ মওকুফ হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *