যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা কি আছে ইসরাইলের ভাগ্যে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা কি আছে ইসরাইলের ভাগ্যে

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মে ১৩, ২০২৪ ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

এ সপ্তাহে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা কৌশলগত ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে এক সাক্ষাৎকারে বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইসরাইল যদি তার পরিকল্পনা অনুযায়ী রাফাহ আক্রমণ করে, তাহলে কী হবে? জবাবে বাইডেন বলেন, ‘আমি তাদের আর অস্ত্র সরবরাহ করব না।’

আমেরিকা ইসরাইল মৈত্রীর ভিত্তিই হলো অস্ত্রের চালান। গত চার দশকে এই প্রথম এতে ফাটল দেখা যাচ্ছে।

গাজায় বেসামরিক প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় রুখতে নিজ দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাপে আছেন বাইডেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটিই জানালেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল আমেরিকার সবচেয়ে কাছের কৌশলগত মিত্র। ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের পর এ ধরনের পদক্ষেপ আর দেখা যায়নি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক বিশেষজ্ঞ এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অ্যারন ডেভিড মিলারের মতে, এই সংঘাতের শুরু থেকেই বাইডেনকে দ্বিধায় দেখা গেছে। তার একদিকে ইসরাইলপন্থী রিপাবলিকান পার্টি, অন্যদিকে নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভক্তি। এখন পর্যন্ত বাইডেন যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে এমন কিছু দেখা যায়নি যাতে আমেরিকা–ইসরাইল সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিন্তু ইসরাইল রাফাহতে স্থল অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দেখা যায়।

গত সোমবার ইসরাইল জানায়, তারা শহরটির পূর্বে হামাসকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্থানীয়রা বিরামহীন বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রায় অকার্যকর হাসপাতালগুলোতেও আহতদের সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়েছে।

জাতিসংঘ বলেছে, প্রায় এক লাখ মানুষ ওই এলাকা থেকে পালিয়েছে এবং তারা খাবার, আশ্রয়, পানি ও স্যানিটেশনের ভয়াবহ সংকটে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার শহরটিতে পূর্ণমাত্রায় স্থল অভিযান চালানোর কথা বলছেন, যেখানে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আছেন। তিনি বলছেন, এখানে লুকিয়ে থাকা হামাসের অবশিষ্ট চার ব্যাটালিয়ন যোদ্ধাকে নিশ্চিহ্ন করতে এই অভিযান জরুরি। যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব সফল হলেও অভিযান চালানো হবে বলে মত তার।

ওয়াশিংটন নেতানিয়াহুকে রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা না করতে বারবার অনুরোধ জানিয়ে আসছে। অ্যারন ডেভিড মিলার বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন আশঙ্কা করছেন, রাফাহতে অভিযান হলে যুদ্ধ বন্ধ বা জিম্মিদের উদ্ধারের আর কোনো উপায় থাকবে না।

বাইডেন প্রশাসনে কাজ করা একজন সাবেক কর্মকর্তা জানান, বাইডেন মিশরের সঙ্গে কোনো সংকট এড়িয়ে চলতে চান। একই সঙ্গে এই অভিযানের ফলে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে ক্ষোভ ও বিভাজন আরও বাড়তে পারে।

মিলার বলেন, ‘এ কারণেই তিনি সংকেত পাঠিয়েছেন।’

গত বুধবার বাইডেনের সাক্ষাৎকার প্রচারের পরপর আমেরিকা ইসরায়েলের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ও ৫০০ পাউন্ডের বোমার দুটি চালান স্থগিত করেছে।

গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে আমেরিকার সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকতে পারে। কিন্তু এতে আরও বলা হয়, এ সংক্রান্ত পূর্ণ তথ্য আমেরিকার কাছে নেই। যার অর্থ সামরিক সহায়তা চালু থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *