মোদির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

মোদির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক

জুন ৬, ২০২৪ ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ফলাফলে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে সর্বাধিক আসন পেয়ে আবারও তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

কিন্তু সরকার গঠনে পরমুখাপেক্ষী হতে হবে দলটির। টানা দুবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় থাকা নরেন্দ্র মোদির সামনে কি চ্যালেঞ্জ আসছে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। খবর এপি, আনাদুলু এজেন্সির।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় এককভাবে সরকার পরিচালনা করে আসছিলেন মোদি সরকার। ২০১৪ সালে ভারতের ক্ষমতায় আসার পর একচেটিয়াভাবে দেশের সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদি মুদ্রা নিষেধাজ্ঞার মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার মতো মেরুকরণমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন। জোট সরকারের ক্ষেত্রে এসকল বিষয়গুলো একচেটিয়া জনপ্রিয়তাকে ক্ষুন্ন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নয়াদিল্লি ভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার আরথি জেরাথ বলেছেন, ‘মোদি একজন আপস করার লোক নন। সুতরাং, তিনি কীভাবে জোট সরকারের টানাপোড়েন এবং চাপগুলো সামাল দেবেন তাই এখন দেখার বিষয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদ কিদওয়াই বলেছেন, এই মেয়াদে জনসংখ্যা ও কল্যাণমূলক নীতিগুলো প্রাধান্য পাবে। কারণ মোদীকে দক্ষিণ রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশের এন. চন্দ্রবাবু নাইডু এবং পূর্বে বিহারে নীতিশ কুমারের মতো আঞ্চলিক নেতাদের ওপর নির্ভর করতে হবে। তারা এই জাতীয় নীতি সমর্থন করেন। এছাড়াও বিজেপি এবারের নির্বাচনের আগে ভারতের পর্যটন খাতের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি এবং হিন্দুত্ববাদীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিল। দলটি বেকারত্বকেও নির্বাচনী ইশতাহারে স্থান দিয়েছিল।

বিজেপির মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বলেছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা এটি বিবেচনায় নিয়েছি এবং সর্বোত্তম যা করা যায় তাই করছি।’

বেসরকারি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি অনুসারে, ভারতে বেকারত্বের হার চলতি বছরের এপ্রিলে বেড়ে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হয়েছে। যা মার্চ মাসে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে এটি ৬ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। প্রতি বছরে ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে মোদি প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি সেই অঙ্গীকার পূরণ থেকে যোজন-যোজন মাইল দূরে।

সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চের ত্রৈমাসিকে সরকারি অনুমান দেখা গেছে, শহুরে এলাকায় ১৫-২৯ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার আগের ত্রৈমাসিকের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের বেশি হওয়া সত্বেও খাদ্যদ্রব্যর দাম বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ জীবনে দুর্দশা বেড়েছে। কেননা এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবার হয়নি। ভারতের জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ। ভারতে এখন মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে, যা তুলনামূলকভাবে কম।

তবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে উঠেছে, এতে বিপাকে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এছাড়াও জোট সরকার গঠনে কৌশলগত দিক থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে মোদির।

এ বিষয়ে বিশ্লেষক পারভীন ডন্থি বলেন, চীনের সাথে টানাপোড়েনের কারণে ভারতের সমস্যা বহুগুণ বেড়েছে। সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা অগ্রসর হয়নি এবং দুই দেশের মধ্যকার সরকার গঠনে একটি অচলাবস্থা রয়ে গেছে। তার মতে, নতুন সরকার অচলাবস্থা ভেঙে এই ফ্রন্টে অগ্রগতির জন্য চাপের মধ্যে থাকবে। এমনকি একই বিষয়টি মালদ্বীপের জন্যেও প্রযোজ্য।

এছাড়াও তার মতে, দেশের ভেতরে কৃষক আন্দোলনসহ একাধিক অভ্যন্তরীন সমস্যায়ও কাজ শুরু করতে হবে সরকারের। কেননা এখন বিরোধী দলের অবস্থানও শক্ত হয়েছে। ফলে জনগণের আন্দোলনকে দমন করার মতো কেউ থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *