বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৩টি চুক্তি-এমওইউ সই হতে পারে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৩টি চুক্তি-এমওইউ সই হতে পারে

জাতীয় স্লাইড

জুন ২১, ২০২৪ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাচ্ছেন আজ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০ থেকে ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি আগের চুক্তির নবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। যেসব বিষয়ে সই হবে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-জ্বালানি, যোগাযোগ, অর্থনীতিসহ সহযোগিতার নানা খাত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

আরও জানা গেছে, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে উল্লিখিত তিনটি বিষয়সহ আরও গুরুত্ব পাবে উভয় দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয়, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ। তিস্তার বিষয়ে ভারতের দিক থেকে নতুন প্রস্তাব আসতে পারে। এছাড়া দুই দেশের বাণিজ্যের মধ্যে ভারসাম্য কমিয়ে সুষম অবস্থা তৈরি এবং একটি ‘ট্রেড প্যাক্ট’ বা বাণিজ্য সংঘের বিষয়ে আলোচনায় স্থান পেতে পারে।

শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি একান্তে বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। ভারত সফরের বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে। আমাদের সব অমীমাংসিত এবং ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনা করা হবে। এর মধ্যে আরও অনেক কিছু আসতে পারে। যেমন কানেক্টিভিটি; ভুটান বা নেপালের সঙ্গে আমাদের যাতায়াত। আমরা যদি বিদ্যুৎ ক্রয় করি তাহলে সেটি কীভাবে ভারত হয়ে আসবে।

তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যখন গিয়েছিলেন সেখানে কথা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ‘দুই সরকারই নতুন ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। আমরা আগামী মেয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর ও প্রসারিত করতে চাই।’

একইদিন (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সফরের সময় উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং তারপর প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা হবে। সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এছাড়া একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক দশকে শক্তিশালী আঞ্চলিক অংশীদারত্বের অংশ হিসাবে বেশ কিছু আন্তঃসীমান্ত উদ্যোগ চালু করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট আজ (শুক্রবার) দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। ফ্লাইটটি বিকাল ৪টায় (দিল্লির সময়) নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং দুদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ড অব অনারও পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে তিনি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন। শেখ হাসিনা একইদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার জন্য হায়দরাবাদ হাউজে যাবেন। উভয়েই সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী তাদের বিবৃতি দেবেন। তারা হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় (দিল্লির সময়) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর থেকে ভারতের রাজধানী ত্যাগ করবেন এবং রাত ৯টায় ঢাকায় অবতরণ করার কথা রয়েছে।

এদিকে বুধবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ভবিষ্যতে দুই দেশের এই সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার একটি দিকনির্দেশনা থাকবে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে। এক ধরনের রূপকল্পের কথা উঠে আসবে তাদের আলোচনায়। যার ধারাবাহিকতায় ব্যাপকতর অর্থে সংযুক্তি, পরিবেশ, মহাকাশসহ নতুন নতুন কোন ক্ষেত্রগুলোতে ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা এগোবে, তার একটা নির্দেশনা থাকবে।

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিস্তা চুক্তিটি যে পর্যায়ে আছে, খুব শিগগির এতে ইতিবাচক কিছু ঘটবে, এমন কোনো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। তবে আশার দিকটি হচ্ছে, তিস্তা ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প বা সংরক্ষণের বিষয়ে সম্প্রতি ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে।

সফরসঙ্গী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসাবে যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এছাড়া আছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি।

প্রসঙ্গত, এটি ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। তিনি গত ৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *