ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে নিহত সেই কিশোরের দাফন সম্পন্ন

ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে নিহত সেই কিশোরের দাফন সম্পন্ন

আন্তর্জাতিক

জুলাই ৩, ২০২৩ ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে নঁতেয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত ১৭ বছরের কিশোর মোহাম্মদ নাহেলের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

শনিবার (১ জুলাই) তার জানাজায় বহু মানুষ অংশ নিয়েছে। এ দিন ফ্রান্সের শহরগুলোতে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকায় আগের দিনগুলোর তুলনায় সহিংসতার তীব্রতা কম ছিল।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওগুলোতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মার্সেইয়ে দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এখান থেকে ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রাজধানী প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি থাকায় প্রতিবাদকারীরা বিক্ষোভ করা থেকে বিরত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার প্যারিসের শহরতলী নঁতেয়ায় নাহেল নিহত হওয়ার পর থেকেই ফ্রান্সের বহু শহরে বিশৃঙ্খলা চলছে।

ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেগাল্ড দাগমানা টুইটে জানান, শনিবার রাতে বিভিন্ন শহর থেকে মোট ৪২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারীদের ‘দৃঢ় পদক্ষেপ’ এর কারণে রাতটি ‘শান্ত’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এ দিন দাঙ্গা মোকাবেলায় ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন ছিল। শুক্রবার রাতে ১৩০০ জনেরও বেশি এবং বৃহস্পতিবার রাতে ৯০০ জনেরও বেশি প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার সন্ধ্যারাতজুড়ে মার্সেইতে পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গাকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। অনলাইনে আসা বিভিন্ন ফুটেজে শহরটিতে পুলিশকে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র লা ক্যানবিয়া অ্যাভিনিউতে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, ভিডিওগুলোতে এমনটি দেখা গেছে।

এ এলাকায় দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে পুলিশের এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সংঘর্ষ হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্যারিসের পুলিশ জানিয়েছে, তারা ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টা থেকে প্যারিস অঞ্চলে সব বাস ও ট্রাম চলাচল দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রাখা হয়।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোন শৃঙ্খলা বজার রাখার প্রচেষ্টা দেখতে প্যারিসে জাতীয় পুলিশের কমান্ড রুমে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

লিলে, লিঁও, নিস ও স্তাসবুর্গে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও আগের রাতগুলোর তুলনায় তীব্রতা কম ছিল। লিঁও থেকে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার সকালে প্যারিসের শহরতলীর এক মসজিদে নাহেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় এক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নাহেলের পরিবারের স্বজন ও অন্যরা সংবাদ মাধ্যমকে আগেই দূরে থাকতে বলেছিল। সব ধরনের ভিডিও, এমনকী ফোনেও, নিষিদ্ধ ছিল। ‘স্ন্যাপচ্যাট বা ইনস্টগ্রাম ব্যবহার করা যাবে না’ বলে দাফনে অংশ নেয়া লোকজনকে আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে চলমান বিক্ষোভের কারণে জার্মানি সফর বাতিল করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এ বছর দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্রীয় সফর করলেন তিনি। এর আগে গত মার্চে ব্রিটিশ রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি ম্যাক্রোঁ।

গত মঙ্গলবার প্যারিসের উপশহর নানতেরে ট্রাফিক বিধি অমান্য করে জোরে গাড়ি চালানোর অভিযোগে নাহেলকে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সে তা অমান্য করে গাড়ি নিয়ে সরে পড়ার চেষ্টা করলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন পুলিশ সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

নাহেলের মৃত্যুর জেরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে। বৃহস্পতিবার রাত নয়টা থেকে প্যারিসের কয়েকটি এলাকায় কারফিউ শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *