নিজস্ব প্রতিনিধি:
৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন অত:পর ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন থেকে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান অবশেষের ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা চেতনা ও আন্দোলন সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক জনকল্যাণমুখী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
বাঙালি জাতির জাগরণ, জাতীয় চেতনার বিকাশ, হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তির জন্য গণজোয়ার, অকুতোভয় সংগ্রাম, জয় বাংলা স্লোগান, নৌকা প্রতীকে ভোটদান ও মহান স্বাধীনতা; এই সবকিছুর মূলেই রয়েছে একটি নাম- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
শেখ মুজিবুর রহমানের রত্নগর্ভা মা সায়েরা খাতুন এর খোকা নাম থেকে ৭১ এর সাত কোটি বাঙ্গালির বঙ্গবন্ধু খেতাব (উপাধি) অর্জনের পেছনে লুকিয়ে আছে হাজারো সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস।
মুজিব বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান,গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পবিত্র মাটিতে তাহার জন্ম,যার জন্য এই সোনার বাংলার মাটি হয়েছে আজ ধন্য।
নেতা তো অনেকে হয়,ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় কতজন রয়? নয়কো মহান জাতির মহান নেতা,স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা। বাঙ্গালিদের মনে জায়গায় সাহস,
জাগিয়ে তোলে মনে শক্তি। শেখ মুজিব তুমি জাতির পিতা,
তোমারই চরণে রইলো হাজারো শ্রদ্ধাভক্তি। কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগনের আছে।
(পৃঃ১০০) অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে (সংগৃহীত)।
বলতাম লিখতে যে পারি না, আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছু তো করতে পারলাম না শুধু এইটকু বলতে পারি নীতি ও আর্দশের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি। -শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদও। উন্নয়নের কৌশলকে তিনি অবিভাজ্য নীতিতে বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে সামাজিক উন্নয়নের পরিধিতে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন, ফলে কার্ল মার্কসের অর্থনীতির উপরি কাঠামো এতদিন যেটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেটি এখন শেখ হাসিনার প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে, যা ‘শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভেবেছেন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া অর্থনীতির সুফল জনগণের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কারণ জনগণ যদি অর্থের ব্যবহার তার শিক্ষা স্বাস্থ্য কিংবা লাভজনক চিন্তায় বিনিয়োগ করতে না পারেন তাহলে সে অর্থ কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে না।
শিশুকাল থেকেই রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক পাণ্ডিত্ব আর প্রজ্ঞার ছাপ প্রখরভাবে প্রকাশ পাচ্ছে বলে বিভিন্ন অঙ্গণে বক্তব্যে উদাহরণ টেনেছেন বিশ্ব নেতৃত্বরা। রাজনীতির বাইরেও শেখ হাসিনার লেখক হিসেবে কুড়িয়েছেন দারুণ সুখ্যাতি। এ পর্যন্ত তিনি রচনা ও সম্পাদনা করেছেন প্রায় ৩০টি গ্রন্থ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেখ মুজিব আমার পিতা, সামরিক বনাম গণতন্ত্র, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, পিপল এন্ড ডেমোক্রেসি ইত্যাদি। শুধু লিখনীর জগৎ নয় সর্বগুণে গুনান্বিত সর্বদিকে পারর্দশী এক অমূল্য রত্নের নাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণের সুবাদে শৈশব থেকেই সংগ্রামী চেতনার সুমহান উত্তরাধিকার বহন করছেন। পিতার সংগ্রামী জীবনের আত্মত্যাগ কাছ থেকে দেখেছেন এবং শিখেছেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবার ও অন্যান্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল, তখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেন। তার যোগ্য নেতৃত্বে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেমন সুসংগঠিত, তেমনি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। অনেক আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়েই পিতার মতো বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। মুহূর্তের জন্য দিশেহারা হননি। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়, ‘তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা এ সমুদ্রে আর কভু হবো নাকো পথহারা।’ ব্যক্তি হিসেবে তিনি অত্যন্ত স্বচ্ছ, সংবেদনশীল, মানবিক, সৎ, মেধাবী ও সাহসী। নেতা হিসেবে দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী। তার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা’, আরেকটি ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং অর্থনৈতিক মুক্তির কাজ শুরু করেছিলেন। সেই কাজ দক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা ও সাহসের সঙ্গে সম্পন্ন করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ইনডেমনিটি আইন বাতিলসহ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সব হত্যাকাণ্ডের বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাহসী ভূমিকা রেখেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সমগ্র বিশ্বের কাছে তিনি আজ উন্নয়ন নেতৃত্বের রোল মডেল হিসেবে সুপরিচিত। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিন অনুপ্রেরণাদায়ী নারী নেতার একজন শেখ হাসিনা। যেখানে তার অসাধারণ নেতৃত্ব, বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্য এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইউমিনাইজেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করে। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি গ্রহণ ও মানবিকতার জন্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (আইপিএস) ও নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। বাংলাদেশে নারী শিক্ষার বিকাশ ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্বদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাভ করেন ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় দূরদর্শী পদক্ষেপ গ্রহণে পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বিজ্ঞ ও সাহসী সিদ্ধান্ত এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ উদ্যোগসমূহ আজ বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে। সাফল্য অগণিত; এত সব সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবেই জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দূরদর্শিতায় উন্নত দেশের কাতারে শামিল হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অদম্য অগ্রযাত্রায় নিজেদের শামিল হতে হবে এবং প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।
তাই এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায় যে, বৈশ্বিক নানাবিধ বাধাবিপত্তি ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শেখ হাসিনা দূরদর্শী নেতৃত্বের অনুকরণীয় রোল মডেল। পাকিস্তানি স্বৈরশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে কঠোর ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮) প্রণয়নের পর ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হয়। কৃষিতে বাম্পার ফলন হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব খাতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গৃহীত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুফল যখন মানুষ পেতে শুরু করে, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলরা জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশ নিমজ্জিত হয় অমানিশার নিকষ কালো অন্ধকারে। দিশেহারা জনগণ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এমনই একজন দূরদর্শী ও যোগ্য নেতার প্রতীক্ষায় থাকেন, যে নেতা তাদের দেবেন উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের সন্ধান।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভারতে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে স্বদেশ প্রত্যার্বতনে জনগণের সেই অভাবই যেন পূরণ হয়। তিনি শুরু করেন স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন। সুদীর্ঘ ২১ বছরের স্বৈরশাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণ তাকে ক্ষমতাসীন করে। শুরু হয় বাংলাদেশের মানুষের জন্য গৌরবময় জীবন এবং উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে নবযাত্রা। এই অভিযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে রাষ্ট্রপরিচালনার সময়কাল ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন অনন্য উচ্চতায়। অতি সম্প্রতি ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—২০৪০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির একটি হাব হবে। আর ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) ২০২২ সালেই জানায়—বর্তমান ধারায় অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ বিশ্বে ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের বিস্ময়ে পরিণত হলো? এক কথায় এর উত্তর হলো :মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তিনটি অসাধারণ গুণ—সততা, সাহস ও দূরদর্শিতা। আওয়ামী লীগের ৭৫ বছরের ইতিহাস, দেশ ও মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে আত্মদানের নিয়োজিত এক সংগ্রামী ইতিহাস।
সুখে-দুঃখে- দুর্যোগে দুর্বিপাকে- সর্বদা গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে- সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাওয়াই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দৃপ্ত প্রত্যয়ের নীতি।
-মোঃ ফারদিন সিয়াম
(শিক্ষার্থী) সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।