দেশের জাতীয় নির্বাচন এবং বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ চায় বিএনপি। এ সংলাপ শুরুর ব্যাপারে যাতে ঘোষণা দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ করে দলটি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৃহস্পতিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা তাদের ডেকেছিলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে খুব দ্রুত সরকার দেশকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা এবং নির্বাচনের দিকেও যেতে পারবে বলে আশাবাদী বিএনপি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, বিএনপির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সংস্কার ভাবনা ও নির্বাচন নিয়ে ভাবনা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। তারা বলেছেন, এই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। ভবিষ্যতেও এ সমর্থন থাকবে। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে তারা অনুরোধ করেন।
তারা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে শঙ্কা ও সম্ভাবনা আছে, সে ব্যাপারেও তারা একমত পোষণ করেন। সবশেষে তারা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, বর্তমান সরকার সংস্কার এবং নির্বাচন সম্পর্কিত ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় যে পদক্ষেপ নেবে, সেটা নিয়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। এছাড়াও পদক্ষেপের সঙ্গে একটি সমন্বিত অংশীদার হবেন।
কয়েকদিন ধরে দলীয় কর্মসূচি থেকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন বিএনপির মহাসচিব। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
এদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মতবিনিময় চলবে। এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ নেওয়ার পর ১২ আগস্ট বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য যমুনায় প্রথম বৈঠক করেন। একই দিন জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার প্রায় সোয়া ঘণ্টার বৈঠক শেষে ‘যমুনা’র বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু খোলাসা করেননি বিএনপির মহাসচিব। তবে বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে বলে জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশাবাদী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যার নেতৃত্বে আছে, তিনি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
তাদের আন্তরিকতা, দেশপ্রেম এবং যোগ্যতা দিয়ে খুব দ্রুত দেশকে স্টেবল (স্থিতিশীল) অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবেন। একই সঙ্গে তারা নির্বাচনের দিকেও যেতে পারবেন। সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবেন বলে আমরা মনে করি।
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কোনো তারিখ নিয়ে আলোচনা করিনি। আমরা কোনো তারিখ বলব না। এটা ওনারা বলবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে পর্যায়ক্রমে।’
২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেন, দেশে কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন। পরের দিন এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিএনপিকে আলোচনায় ডাকেন ড. ইউনূস।
