নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে আসছে ৪০ প্রকল্প

নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে আসছে ৪০ প্রকল্প

জাতীয় স্লাইড

অক্টোবর ১১, ২০২৪ ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ কম, যা প্রায় ২ শতাংশ। এটি আরও বাড়াতে চাই। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে শিগগির ৪০টি প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ দরপত্র সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরাম-২০২৪ সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।

দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ ফোরামের আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ। এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক সুমাইয়া রোজালিন ইসলাম।

এতে সহযোগি হিসাবে ছিল অ্যাপারেল ইমপ্যাক্ট ইনস্টিটিউট, ক্যাসকেল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জিআইজেড, এইচএন্ডএম, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস, পিডিএস লিমিটেড এবং টার্গেট।

ফাওজুল কবির খান বলেন, কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে টেকসই উদ্যোগের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে বড় পরিসরে উদ্যোগের অংশ হিসাবে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

আমরা সাসটেইনেবিলিটিতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বৃহত্তর সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি আশা করি, আপনারা সাসটেইনেবিলিটির দিকে অগ্রযাত্রায় আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, উদ্যোক্তা হিসাবে এবং ব্যবসা হিসাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা কীভাবে পণ্য উৎপাদন করি। সবচেয়ে কম খরচে উৎপাদন করাটাই কেবল বিবেচ্য বিষয় নয়। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তব ঝুঁকি, যা আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার। জলবায়ু পরিবর্তনকে কেবল কমপ্লায়েন্স ইস্যু হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয় বরং সঠিক ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

এ ফোরামে বাংলাদেশের টেকসই লক্ষ্যমাত্রাঅর্জনে সংলাপ, সহযোগিতা এবং কার্যকরী কৌশলসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত এবং ত্বরান্বিত করার জন্য সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৪৫০ জন সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

দিনব্যাপী এবারের ফোরামের কর্মসূচির মধ্যে ছিল মূল বক্তব্য উপস্থাপনা, প্যানেল আলোচনা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞগণের উপস্থাপনা প্রদান এবং কর্মশালা, যেখানে প্রায় ৪০ জনদেশী ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তারা সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক এবং কার্বন-নিরপেক্ষ ভবিষ্যত গড়ে তোলার বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। তাছাড়া এ ফোরামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং রাষ্ট্রদূত এইচই মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণদেশের জন্য বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতিটি ভগ্নাংশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবার একটি সামষ্টিক দায়িত্ব রয়েছে। অনুদান এবং ছাড়যোগ্য ঋণ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে ৩০০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ একত্রিত করার গ্লোবাল গেটওয়ের লক্ষ্য রয়েছে।

জার্মানির রাষ্ট্রদূত অচিম ট্রস্টার বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা বাংলাদেশ এবং জার্মানি উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টেকসই, নিরাপদ এবং স্থিতিস্থাপক উপায়ে তার জ্বালানি চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

নেদারল্যান্ডস কিংডমের দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স থিজ ওয়াউডস্ট্রা বলেন, আমি সত্যিই আনন্দিত যে, পোশাক শিল্প ডিকার্বনাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এবং জাতীয় ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট বিবেচনা করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে টেকসই এবং সার্কুলার টেক্সটাইলকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে এবং আমাদের দুই দেশের মধ্যে জ্ঞানভাগাভাগির কাজটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশের পোশাকখাত এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ক্লাইমেট অ্যাকশন কোনো বোঝা নয় বরং উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি ব্যবসায়িক সুযোগ। সস্তা শ্রম বাংলাদেশের জন্য এখন আর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নয়। উদ্যোক্তা হিসাবে আমরা যদি আমাদের ক্রেতাদের কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জন না করি, তাহলে আমরা সফল হতে পারব না। লক্ষ্য অর্জনের জন্য, উৎপাদনকারীদের আরও সামষ্ঠিক দায়িত্ব নিতে হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সমর্থন প্রয়োজন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই), বাংলাদেশে ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ও সুইডেন দূতাবাস, আইএলও, লডসফাউন্ডেশন, অক্সফাম বাংলাদেশ, এবং ইউএসএআইডি বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যাকশন ফোরামে একত্রিত হয়। ’

তাছাড়া বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আর্মস্ট্রং ফ্লুইড টেকনোলজি, ফোর্বসমার্শাল, গ্রান্ট থর্নটন ভারত এলএলপি, ইলুকুম্বুরা ইন্ডাস্ট্রিয়ালঅটোমেশন (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং জিনকো সোলারের বিশেষজ্ঞদেরসহায়তায় আয়োজন করা হয় ‘ইন্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে ৩০০ এর অধিক প্রকৌশলী এ ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *