ঝিনাইগাতীতে বালু দস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত ফসলি জমি, বিপাকে অর্ধশত কৃষক

ঝিনাইগাতীতে বালু দস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত ফসলি জমি, বিপাকে অর্ধশত কৃষক

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ ৩:৪৯ অপরাহ্ণ

মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বালু দস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে দীঘিরপাড় এলাকার প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি। ফলে অর্ধশত কৃষক তাদের ফসলি জমি চাষাবাদ না হওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পরেছে।

জানা গেছে, স্থানীয় বালু দস্যুরা বালু উত্তোলনের নাম করে অসহায় কৃষকদের আবাদি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমি থেকে ৫/১০ ফুট গর্ত করে অবাধে মাটি কেটে নেয়ায় চাষাবাদ অনুপযোগি হয়ে পড়ছে জমিগুলো।

দীঘিরপাড় গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পুর্বে দীঘিরপাড় এলাকায় মহারশি নদী ভাংগনের কবলে পড়ে অর্ধশত কৃষকের জমি। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার জমিগুলো কৃষকদের নামে সিএস, আরও আর রেকর্ড থাকলেও নদী ভাঙ্গনের কারণে বিআরএস রেকর্ড হয় সরকারের নামে।

পরবর্তীতে জমিগুলো আবারো জেগে উঠে। সমতল ভুমিতে পরিনত হয় এলাকা। পুরো এলাকা নদীভরাট হয়ে গেলে, ওই জমির মালিকরা জমিগুলো চাষাবাদ শুরু করে। উক্ত জমি চাষাবাদ করে পরিবারের সদস্যদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা। দীঘিরপাড় গ্রামের কৃষক নাজিমুল হকসহ অন্যান্য কৃষকরা বলেন, গত প্রায় একমাস ধরে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মহারশি নদীর বালু মহালের ইজারাদারের যোগসাজশে ওই সব ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

ভেকু দিয়ে অবাধে কেটে নেয়ার ফলে তাদের জমিগুলো চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। কোন বাধা নিষেধও মানছেন না তারা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে কৃষকরা। শুধু তাই নয় মাহিন্দ্র যোগে এসব মাটি পরিবহনের ফলে দীঘিরপাড় থেকে ঝিনাইগাতী সদর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার কাচা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। আগামী বর্ষায় নদী মহারশি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়।

দীঘিরপাড় গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম, আইজ উদ্দিন, আসাদুল, আক্রাম হোসেন, দুলাল মিয়া, রহুল আমিন, মজিবর রহমানসহ অন্যান্য কৃষকরা জানান, তাদের জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বাধা নিশেধও কোন ওজর-আপত্তি কিছুই মানছেন না তারা। প্রশাসনের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেও কোন ফল পাননি তারা।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার দৃশ্য। কৃষকদের জমিগুলো ক্ষতবিক্ষত। চাষাবাদ অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বালু উত্তোলন করার কথা নদী থেকে। কিন্তু ইজারাদারের লোকজন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সমতল ভূমি কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

কৃষকরা তাদের জমির উপর থেকে মাটি কাটা বন্ধের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন বলে জানান কৃষকরা।

কিন্তু এর পরেও তাদের জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। কৃষকরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদের সাথে কথা হলে তিনি ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান।

কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গত কয়েক দিনেও মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। এব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *