করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের হোম অফিসে পাঠিয়ে দেয়। করোনার প্রকোপ কমে আসেই হোম অফিস থেকে অফিসে ফিরতে শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতি বদলালেও নতুন অভ্যাস থেকে ফিরতে চাচ্ছেন না অনেকেই। আর এ কারণেই চাকরি ছাড়লেন ভারতের আট শতাধিক কর্মী।
হোয়াইটহ্যাট জুনিয়র নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে এ ঘটনা। এতদিন বাড়িতে বসে কাজ করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। গত ১৮ মার্চ ইমেইল করে তাদের অফিসে ফিরতে বলা হলে একযোগে শুরু হয় কর্মীদের পদত্যাগ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরু ও গুরুগাঁওয়ের হোয়াইটহ্যাট জুনিয়রের কর্মীদের মেইলের মাধ্যমে নিজ নিজ কার্যালয়ে এক মাসের মধ্যে যোগদানের জন্য বলা হয়। কিন্তু কর্মীরা কাজে যোগদান না করে একে একে পদত্যাগ করতে শুরু করেন। আট শতাধিক কর্মী এখন পর্যন্ত পদত্যাগ করেছেন। আরও কর্মী পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
পদত্যাগ করা কর্মীরা বলছেন, অফিস গিয়ে কাজ করতে হলে তাদের পকেটের অর্থ খরচ হয়। বাড়িতে বসে কাজ করলে তা হয় না। তাছাড়া গত দুই বছরে তারা বাড়ি থেকেই কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তাই এখন আর অফিসে যেতে চান না। কর্মীরা একযোগে পদত্যাগ করায় বিপাকে পড়েছে বহুজাতিক শিক্ষাপ্রযুক্তি কোম্পানি বাইজু অধিগ্রহণকৃত প্রতিষ্ঠান হোয়াইটহ্যাট জুনিয়র।
কর্মীদের পদত্যাগের কারণ আছে আরও। সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলছে, কোডিং শিক্ষাবিষয়ক প্লাটফর্ম হোয়াইটহ্যাট জুনিয়র ছিল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং লেখক করণ বাজাজের। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি হোয়াইটহ্যাট জুনিয়রকে বিক্রি করে দেন তিনি। বাইজু এ প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা কিনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত সব কিছুই ভালোভাবে চলছিল। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় ২০২১ সাল থেকে করণ চলে যাওয়ার পর থেকে। ৩০ কোটি ডলার দিয়ে হোয়াইটহ্যাট জুনিয়রকে বাইজুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন করণ।
বিপদে পড়ে তাই কর্মীদের পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে হোয়াইটহ্যাট জুনিয়র। কর্মীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এক বিবৃতিতে হোয়াইটহ্যাট জানায়, গত ১৮ এপ্রিল থেকে আমাদের কর্মীদের কার্যালয়ে ফিরতে বলা হয়েছিল। প্রথমে গুরুগাঁও ও মুম্বাইয়ে আমাদের সেলস এবং সাপোর্ট বিষয়ক কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়। তাদের জন্য আমরা মেডিকেল ও ব্যক্তিগত ইমার্জেন্সির ব্যবস্থা করেছি। আবাসনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। এ সময়ে আমাদের সাথে যারা প্রশিক্ষক হিসেবে আছেন, তারা নিজ নিজ বাসা থেকেই দায়িত্ব পালন করবেন।
ভারতের হোয়াইটহ্যাট জুনিয়রই যে এই সমস্যায় পড়েছে তা নয়। কর্মী পদত্যাগের খড়গ পড়েছে প্রযুক্তিবিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপলেও। এখন পর্যন্ত কোম্পানির যেসব কর্মী বাড়িতে বসে কাজ করছিলেন; তাদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন অফিসে এসে কাজ করতে বলা হয়। এ সিদ্ধান্ত সামনে আসার পর কোম্পানির কর্মীরা প্রতিবাদ শুরু করেন। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুকও কর্মীদের অফিসে আসার বিষয়ে জোর দেন। এরপর থেকেই শুরু হয় পদত্যাগ। চলতি মাসের শুরুতে প্রতিষ্ঠানের মেশিন লার্নিং বিষয়ক পরিচালক ইয়ান গুডফেলো পদত্যাগ করেন।