রুবলে গ্যাস কিনছে ইউরোপের চার দেশ

আন্তর্জাতিক স্লাইড

এপ্রিল ২৯, ২০২২ ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাজি না হওয়ায় বুধবার ইউরোপের দুই দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার বন্ধু নয়, এমন দেশগুলো রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে চাইলে এর মূল্য পরিশোধ করতে হবে দেশটির মুদ্রা রুবলে। পুতিনের এমন ঘোষণার পর ইউরোপের চার দেশ রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ করছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রমালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, এমন এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরো জানায়, ইউরোপের ২৩ দেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। তবে এখন পর্যন্ত অনেক ক্রেতাই রুবলে দাম পরিশোধের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মধ্যেই বুধবার এ ইস্যুতে ইউরোপের দুই দেশ পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় রুশ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাশিয়ার এমন শর্ত পূরণের জন্য ইউরোপের ১০টি কোম্পানি ইতোমধ্যে গ্যাজপ্রমে তাদের ব্যাংক হিসাব খুলেছে।

রুশ মুদ্রা রুবলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন না করলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল রাশিয়া। ফলে ১ এপ্রিল থেকে রুবলে গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। তবে রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাসের অর্থ প্রদানের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে পশ্চিমা অনেক কোম্পানি ও সরকার। কারণ বিদ্যমান চুক্তিতে এ অর্থ ইউরো বা মার্কিন ডলারে প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এখন রুবলে প্রদানের দাবি করার অর্থ হলো বিদ্যমান চুক্তির লঙ্ঘন করা।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেল বা গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। কারণ ইইউর সদস্য দেশগুলো রুশ জ্বালানির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট গ্যাস আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ এবং মোট তেল আমদানির ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে হয়ে থাকে। রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হলে ইইউর কাছে এর কোনো সহজ বিকল্প নেই। এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলোয় গ্যাস বিক্রি করে রাশিয়া বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০ মিলিয়ন ইউরো আয় করে এবং দেশটির কাছে অন্য বাজারে জ্বালানি সরবরাহ করার কোনো উপায় নেই।

জার্মানি তাদের চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস এবং এক তৃতীয়াংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করে। ইতোমধ্যে দেশটি তার নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্ভাব্য ঘাটতির আশঙ্কায় গ্যাস ও তেল ব্যবহার কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে পুতিনের এ ঘোষণাকে হুমকি হিসেবে অবহিত করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স।

পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধকে অকার্যকর করে ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার রুবল দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। হারানো মান ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি রুশ মুদ্রাটি নিষেধাজ্ঞার আগের অবস্থানকেও অতিক্রম করেছে। গেল ২২ এপ্রিল প্রতি ডলারের বিপরীতে রুশ মুদ্রা রুবলের মান ছিল ৭৪। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর যা নেমে গিয়েছিল ১৩৯ রুবলে।

তেল ও গ্যাস কিনতে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর রুবলে মূল্য পরিশোধের শর্ত আরোপ করে ক্রেমলিন। পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়া প্রতি মাসে ৩০ বিলিয়ন ইউরোর জ্বালানি বিক্রি করে। মস্কোর শর্ত অনুযায়ী, ইউরোপকে এখন থেকে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ রুবলে পরিশোধ করতে হচ্ছে।