পুতিনের ভিয়েতনাম সফর এবং ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোমেসি’

পুতিনের ভিয়েতনাম সফর এবং ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোমেসি’

আন্তর্জাতিক

জুন ২১, ২০২৪ ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ

এশিয়া সফরে উত্তর কোরিয়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন অবস্থান করছেন ভিয়েতনামে। কোরিয়ার মতো ভিয়েতনামেও উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন পুতিন। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট তো লাম পুতিনকে ‘কমরেড’ হিসেবে অভিহিত করে তাকে গত মার্চে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে পুতিনের কোরিয়া ও ভিয়েতনাম সফরকে ভালো চোখে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। বরং এর ফলে পুতিনের হাতকে শক্তিশালী করা হচ্ছে বল মত তাদের। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন হলেও রাশিয়া ইস্যুতে তাদের আপত্তি আমলে নিচ্ছে না ভিয়েতনাম।

এমনকি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও খোলাখুলিভাবে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেনি পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম। রাশিয়ার নিন্দা জানিয়ে তোলা জাতিসংঘের বেশকিছু প্রস্তাবে তারা ভোটদানে বিরত থেকেছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্ক বেশ পুরোনো। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের দিকে তখনকার কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর ভিয়েতনামকে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে সহায়তা করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। এছাড়া ১৯৭৮ সালে যখন খেমার রুজ শাসকদের হটাতে কম্বোডিয়া আক্রমণ করে ভিয়েতনাম, তখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পাশে থেকেছে। সে সময় চীন এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে ভিয়েতনামকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে এবং বিভিন্ন প্রকার নিষেধাজ্ঞা দেয়।

রাশিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্ক তখন থেকেই অনেক গভীর। ভিয়েতনাম বরাবরই রাশিয়ায় তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে। যদিও এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক দেশই রাশিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে; ভিয়েতনামকে তাই পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে হয়েছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

বর্তমানে ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটা বাংলাদেশের মতো। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়; এই নীতি মেনেই এখন রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে তারা। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেও কোনো ধরনের জোটভুক্ত হতে চায় না দেশটি। ভিয়েতনামের এই কূটনৈতিক অবস্থানকে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা ‘ব্যাম্বু ডিপ্লোমেসি’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এর মানে হচ্ছে, সময় বুঝে দুপক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও কট্টরভাবে কোনো পক্ষের সমর্থন করে না ভিয়েতনাম। ঠিক যেমন বাতাসে বাঁশঝাড়ের বাঁশগুলো বাতাসের তোড়ে এদিক-ওদিক কিছুটা হেলে পড়লেও বাতাস থামলেই আবার নিজেদের জায়গায় স্থির হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র: বিবিসির দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিষয়ক প্রতিবেদক জোনাথন হেডের লেখা থেকে অনূদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *