সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আন্দোলনের ঝাঁজ কমার কোনো লক্ষ্মণই দেখা যাচ্ছে না। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। যার জেরে অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূল সরকারে।
তবে অনেকেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ঝানু রাজনীতিবিদ। হারা ম্যাচ জেতানোর কৌশল তার রপ্ত করা। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে উদ্যোগ নেওয়া এবং তারপর বৈঠকের জন্য ২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করে এবং শেষমেশ পদত্যাগের প্রস্তাব যেভাবে দিলেন মমতা, তা একপ্রকার কৌশলই বটে।
সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বিচারের দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, আমি পদত্যাগ করতে রাজি। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার চাই না। আমি চাই তিলোত্তমা বিচার পাক, সাধারণ মানুষ বিচার পাক।
এর আগে নবান্ন সভাঘরে কনফারেন্স হলের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে একা বসে থাকতে দেখা যায়। চারপাশে খালি চেয়ার। অপেক্ষা করছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য। এই চিত্রও এক কৌশল বলা যায়।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, কর্মবিরতি চালাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাদের সঙ্গে কথা বলার অজুহাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার এক খেলা শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার সরকারপক্ষের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠকে শেষবেলায় ভেস্তে যায়। ২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেছেন মমতা। কিন্তু শর্ত না মানায় বৈঠকে শেষ পর্যন্ত যোগ দেননি জুনিয়র চিকিৎসকরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতাক বাংলা জানিয়েছে, তরুণ চিকিৎসকদের জন্য মমতার অপেক্ষা করার মুহূর্তের সেই ভিডিও এবং বৈঠক কক্ষের খালি চেয়ারের দৃশ্য প্রকাশ্যে এসেছে। যা অত্যন্ত অর্থবহ। যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন, তাই জুনিয়র চিকিৎসকদের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের শর্ত মানা সম্ভব হয়নি বলে যুক্তি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ১৫ জন জুনিয়র চিকিৎসককে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হলেও পরে তাদের দাবি মেনে ৩২ জনকে অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি পূরণ না হওয়ায় শেষমেশ ভেস্তে যায় বৈঠক। ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করে চলে যেতে হয় মমতাকে। আর এই গোটা পর্বে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের যেন খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করল সরকারপক্ষ।
সংবাদ মাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মমতার হাতে একটা ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ (এমন এক শক্তি যা সবকিছু শেষ করে দেয়) রয়েছে। সেটি হলো ভিকটিম কার্ড। যখনই তিনি মনে করেন যে, সব অস্ত্র ব্যর্থ, তখনই তিনি হাতে তুলে নেন ভিকটিম কার্ড। আর সেই অস্ত্র দিয়েই ঘায়েল করেন প্রতিপক্ষকে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে এই ভিকটিম কার্ডের অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন মমতা। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর অপব্যবহার এবং বাংলাকে টার্গেট করা নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই সময় কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই-এর অভিযানের সময়ও এই অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন মমতা। ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে বসেছিলেন।
আরজি কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদের সুর যেভাবে তীব্র হচ্ছে, এই আবহে এবার সেই ভিকটিম কার্ড অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছেন মমতা। অচলাবস্থার জন্য বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, চিকিৎসকদের কাজে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন। আবার জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেছেন, আমি তাদের ক্ষমা করেছি। কারণ তারা খুব ছোট।
কেন ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহার করতে হলো মমতাকে?
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এমন জনজাগরণ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কখনই দেখা যায়নি। যত দিন যাচ্ছে, আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়ছে। শাসকদলের অন্দরেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। প্রতিবাদের আগুন থামার কোনো লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। এর আগেও মমতা সরকারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও তা ম্যাজিকের মতো সে সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিন্তু আরজি করে ধর্ষণ মামলায় কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় কর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। এখনো পর্যন্ত তৃণমূলের অন্তত ৪ জন বড় নেতা বিরোধিতা করেছেন। এত কিছুর মধ্যেও তিনি পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়ে তার সবচেয়ে প্রিয় পুলিশ কমিশনারকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর।