এপ্রিল ২৫, ২০২২ ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ
শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকা ও অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়। মূলত যে মসজিদে জামাতের সঙ্গে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়, এমন মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়। প্রতিবছর রমজানের শেষ দশকে নবিজি (সা.) নিয়মিতভাবে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। জাগতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগের জন্য পুরুষদের মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে অবস্থান করাই ইতিকাফ।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘নবিজি (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশক (মসজিদে) ইতিকাফ করতেন। নবিজি (সা.) ইতিকাফের এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, কখনো তা ছুটে গেলে ঈদের মাসে আদায় করতেন।’
ইমাম আবু হানিফার মতে, যে মসজিদে জামাতসহকারে নামাজ হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ বৈধ নয়। ইতিকাফ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো-মুসলমান হওয়া, পাগল না হওয়া, বালেগ হওয়া, নিয়ত করা, ফরজ গোসলসহ হায়েজ-নেফাছ থেকে পবিত্র হওয়া, রোজা রাখা। মসজিদে ইতিকাফ করা।
প্রত্যেক ইতিকাফকারী রোজাদারের আল্লাহর ইবাদত, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দুয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফারে ব্যস্ত থাকা আবশ্যক। ইতিকাফ কয়েক ধরনের রয়েছে।
ওয়াজিব ইতিকাফ : আল্লাহতাআলা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানত পূর্ণ করে।’ (সুরা হজ : ২৯)। মান্নতের ইতিকাফ পূর্ণ করা ওয়াজিব। তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন-কেউ যদি বলে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করব, এ অবস্থাতেও ইতিকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে।
সুন্নত ইতিকাফ : রমজানের ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুলফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত সুন্নত ইতিকাফের সময়। কারণ রাসুল (সা.) প্রত্যেক বছর এ দিনগুলোতেই ইতিকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতিকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গুনাহগার হবে।
নফল ইতিকাফ : সুন্নত ও ওয়াজিব ইতিকাফ ছাড়া বাকি সব ইতিকাফ নফল। এই নফল ইতিকাফ যে কোনো সময় করা যায়। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা, কেউ যতক্ষণ চায় করতে পারে। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতিকাফের নিয়ত করা সুন্নত। রোজারও প্রয়োজন নেই।
উত্তম ইতিকাফ : ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান মসজিদুল হারাম, এর পর মসজিদে নববি, এরপর মসজিদে আকসা। এরপর জুমআ মসজিদ। যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেন মসজিদে হারামে ইতিকাফ আদায় করে। এটি সওয়াব ও জামাতের দিক থেকে সর্বোত্তম। মহান আল্লাহ আমাদের ইতিকাফ করে তাঁর সান্নিধ্য অর্জনের সুযোগ দিন। আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও বিশ্লেষক