একটু একটু করে বৈশ্বিক মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। দেউলিয়া হওয়ার খাতায় নাম উঠেছে বিশ্বের নানা দেশের। পুঁজিবাদ বিশ্বের এই চরম অর্থনৈতিক অস্থিরতার প্রথম শিকার হলো শ্রীলংকা। ‘বৃষ্টির দিনে ছাতা সরিয়ে নেয় ব্যাংক’-লংকার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা কেউই পাশে দাঁড়ায়নি শেষ বেলায়। কারণ সর্বস্বান্ত হতে বসা রাষ্ট্রগুলোর আগাম লাইফ সাপোর্টের কোনো নীতি থাকে না। থাকলে রিজার্ভের শেষ ৫০ মিলিয়ন ডলার আঁকড়ে পড়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি সবার প্রথমে লাইনে দাঁড়াত।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এই সপ্তাহে কাজ করা শুরু করেছে লংকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে। শোনা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে কঠোর কিছু সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে শ্রীলংকাকে। অর্থনৈতিক সাহায্যও আসবে তার সঙ্গে। কিন্তু লংকাকে নিয়ে শঙ্কায় আছে বিশ্বব্যাংক। শুধু অব্যবস্থাপনা নয়, একটি রাষ্ট্র ধসের পেছনে দায়ী আরও অনেক কিছু। সংকটের শুরু লংকায় হলেও এর সমাপ্তি লংকা না বলে আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক।
নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে উভয় সংকট। বিপদের মাঝে বিপদ বুঝি একেই বলে। একটি-দুটি নয় বরং তিন তিনটি সমস্যার জর্জরিত রাষ্ট্রগুলো। ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে দিন দিন। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে জ্বালানি আর খাদ্য সংকট। দাম বাড়তির দিকে। সঙ্গে আছে প্রায় তিন বছর ধরে চলতি মহামারি।
বিশ্বব্যাংকের বসন্ত বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ড্যাভিড মালপাস বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে আমি অনেক চিন্তিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘একই সময়ে দাম বেড়েছে জ্বালানি, সার এবং খাদ্যের, আছে সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও। সবদিক থেকে একদম জেঁকে বসেছে তাদের।’
জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা ইউএনসিটিএডি তাদের একটি সদ্য করা রিপোর্টে দিয়েছে এই তালিকা। বর্তমানে পৃথিবীতে ১০৭টি দেশ সম্মুখভাবে লড়ে যাচ্ছে এমন তিনটি সংকটের যে কোনো একটির সঙ্গে। সংকটগুলোর মাঝে আছে খাদ্যদ্রব্য এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আর কঠিন অর্থনৈতিক সমস্যা। অপরদিকে ৬৯টি দেশ বসবাস করছে তিন সংকট নিয়েই। আফ্রিকার ২৫টি, এশিয়া ও প্রশান্তর ২৫টি এবং ল্যাটিন আমেরিকা ও প্রশান্তর ১৯টি দেশ আছে এর মাঝে।
আশঙ্কাতে থাকা দেশগুলোর তালিকা একদিকে বড় অপরদিকে বিস্তৃত। ইতোমধ্যেই মিসর এবং তিউনিশিয়ার সঙ্গে উদ্ধার আলাপ শুরু করেছে আইএমএফ। রাশিয়া এবং ইউক্রেনে উৎপাদিত গমের প্রধান আমদানিকারক এই দুটি দেশ। একই ভূখণ্ডের দেশ পাকিস্তানও আছে শঙ্কার মুখে। বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে। চড়া দামে আমদানি করা লাগছে বিদ্যুৎ। সেটা সামাল দিতে এই পন্থা হাতে নিল পাক সরকার। সাব-সাহারান দেশগুলোকে রাখা হচ্ছে বিশেষ নজরদারিতে। এর মাঝে ঘানা, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইথিওপিয়া আছে তালিকার শীর্ষে। সম্প্রতি আইএমএফের সঙ্গে আর্জেন্টিনা প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি ঋণচুক্তি সই করেছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে এল সালভেদর এবং পেরু আচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বাতাসে তাসের ঘরের মতো লুটিয়ে পড়বে অনুমান করা তুরস্ক এখনও ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র অব্যবস্থাপনা আর ৭০% মুদ্রাস্ফীতির হারের পরও নুইয়ে পড়েনি তুরস্ক।