কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহতে কেমন হবে ইরানের ভূমিকা?

কাসেমের নেতৃত্বে হিজবুল্লাহতে কেমন হবে ইরানের ভূমিকা?

আন্তর্জাতিক

নভেম্বর ৩, ২০২৪ ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

নাঈম কাসেমের হিজবুল্লাহর নতুন নেতা হওয়া লেবানিজ আন্দোলনের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিশেষ করে স্বল্পমেয়াদে ইরান আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

ইসরাইলি হামলায় পূর্ববর্তী প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার এক মাস পর, গত মঙ্গলবার শুরা কাউন্সিলের মাধ্যমে নাঈম কাসেমকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করা হয়েছে।

হিজবুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র মিডল ইস্ট আই-কে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে দলের পরবর্তী নেতৃত্বের জন্য কাউন্সিলের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। যাতে নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায় এবং দলের ভেতরে সমন্বয় আরও দৃঢ় করা যায়।

প্রায় ৩২ বছর হিজবুল্লাহর নেতৃত্বে থাকা নাসরুল্লাহ সামরিক এবং মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক বিষয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন। তবে নাঈম কাসেম মূলত সাংগঠনিক বিষয় ও ধর্মতত্ত্বে মনোযোগী থাকায় তার এ ধরনের সামরিক অভিজ্ঞতা তেমন নেই।

এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ইরান হিজবুল্লাহকে তার কৌশলগত পরামর্শ আরও জোরালোভাবে দিতে পারে। যদিও সরাসরি হস্তক্ষেপ এড়িয়ে ইরান সম্ভবত কৌশলগতভাবে হিজবুল্লাহর ওপর তার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করবে। যাতে গোষ্ঠীটির আভ্যন্তরীণ শাসন কাঠামো এবং স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে।

এ বিষয়ে আলি রিজক নামে একজন লেবানিজ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ‘নাসরুল্লাহ আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে ইরানের জন্য নির্ভরযোগ্য এক ব্যক্তি ছিলেন, যা কাসেমের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। এর ফলে ইরান হয়তো এই পরিস্থিতিতে আরও সক্রিয় হবে’।

হিজবুল্লাহ মূলত একটি লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাদের জনপ্রিয়তা ও বৈধতা স্থানীয় সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান হিজবুল্লাহর নেতৃত্বে তার প্রভাব বাড়ালেও সরাসরি অংশগ্রহণের পরিবর্তে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।

পরিচিত নেতা কাসেমের উত্থান

নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর অনেকেই হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে পরবর্তী নেতা হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। তবে ইসরাইলের দ্বিতীয় এক হামলায় সাফিয়েদ্দিনও নিহত হন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে নাসরুল্লাহর ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাঈম কাসেমই দলটির একমাত্র পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। তার এই দায়িত্ব গ্রহণ হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখারই সংকেত।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

কাসেমের নিয়োগের ফলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিজবুল্লাহর সামগ্রিক কৌশলে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। তবে কাসেমের রাজনৈতিক ভূমিকা প্রতিফলিত হতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি তার পূর্বসূরির তুলনায় লেবানিজ রাজনীতিতে অনেক বেশি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। যদিও তিনি হত্যার হুমকির কারণে কখনো প্রকাশ্যে আসেননি।

বিশ্লেষকদের মতে, সামগ্রিক কৌশলগত বিষয়ে কাসেমের নতুন দায়িত্ব হয়তো খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মঞ্চে কাসেমের একটি নতুন প্রভাব তৈরি হতে পারে।

নাসরুল্লাহ সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলেও কাসেম স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরও সক্রিয় হতে পারেন। হিজবুল্লাহর শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করতে কাসেম আরও দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারেন বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সূত্রটি জানায়, যদিও নাসরুল্লাহ তার অবস্থানে আরও মধ্যমণি ছিলেন। তবে কাসেমের যে পরিচিতি রয়েছে, তা থেকে সম্ভবত তিনি আরও সমন্বয়পূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন।

সূত্রটি আরও জানায়, এটা নিশ্চিত যে, কাসেমের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ তাকে লেবাননের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে, যা দেশটির প্রেসিডেন্সি এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিতর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

একই সময়ে কাসেমকে হিজবুল্লাহর সংগঠন পুনর্গঠন, তার চারপাশের মানুষের সমর্থন আদায়, আস্থা পুনরুদ্ধার এবং যুদ্ধের আগে দলের স্থিতিশীলতা পুনঃস্থাপন করার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এ বিষয়ে আলি রিজক বলেন, হিজবুল্লাহ তাদের নেতা হিসেবে বর্তমানে কাসেমকেই সঠিক ব্যক্তি হিসেবে দেখছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ প্রতিপক্ষরা যে কোনো সম্ভব দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

হিজবুল্লাহ সংশ্লিষ্ট এক বিশ্লেষক জানান, কাসেমের ব্যক্তিত্ব নাসরুল্লাহর তুলনায় কিছুটা স্থানীয়। তিনি পূর্বে আঞ্চলিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং একটি আঞ্চলিক চরিত্র এবং মাত্রা নিয়েই সক্রিয় ছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুল্লাহর নেতাদের মধ্যে একমাত্র নাসরুল্লাহই বিশেষ মর্যাদা ধারণ করেছিলেন, যা অন্য কেউই অর্জন করতে পারেনি। নাসরুল্লাহ ছিলেন দলটির মহাসচিব এবং শুরা কাউন্সিলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধিও।

সূত্রটি জানায়, নাসরাল্লাহ যখন দলের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি ইরানের প্রতিনিধিত্ব করতেন এবং হিজবুল্লাহর অভ্যন্তরে বিশেষ প্রভাব রেখেছিলেন। তবে কাসেম হয়তো সেই একই মর্যাদা নাও পেতে পারেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাসেমের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ একটি দলীয় নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যেখানে শুরা কাউন্সিলের সদস্যরাই সিদ্ধান্তে অংশ নেবেন। সূত্র: মিডল ইস্ট আই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *