ঢাকায় ভারতবিরোধী ‘হাওয়া’ বন্ধ করতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় দিচ্ছে না নরেন্দ্র মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী মোদির নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে গাজিয়াবাদের হিন্ডন মিলিটারি এয়ারবেসে পাঠিয়ে খোদ মুজিবকন্যাকে এ কথা সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। দোভালের সঙ্গে বৈঠকে বসে শেখ হাসিনা একবার মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। তবে দোভালকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য তুলে হাসিনা বাংলাদেশের বিক্ষোভ আন্দোলনের পেছনে একাধিক রাষ্ট্রের মদদের অভিযোগ করেছেন বলে সূত্রের খবর।
বাংলাদেশে হাসিনার ইস্তফা ও সেনাবাহিনীর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর দীর্ঘ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত বাংলাদেশের কাউকেই ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হবে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ঘিরে থাকা পুরো সীমান্ত ও সব চেকপোস্টে নজরদারি বাড়াতে বিএসএফ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের বিএসএফের ডিজিকে রাতেই কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নয়াদিল্লি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের খবর, মোদি সরকারের কাছে আশ্রয় না পেয়ে রাতের বিমানে বোন রেহানাকে নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন শেখ হাসিনা। কারণ, ব্রিটেন শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছে। অবশ্য শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ বিষয়টিকে ভারত সরকারের বড় ব্যর্থতা বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন। কারণ, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার পাশাপাশি হাসিনাকে সুপরামর্শ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেনি। আসলে মোদি নিজেই দেশের অভ্যন্তরে নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় পড়শি দেশে নজর দিতে না পারায় খেসারত দিতে হলো বন্ধু হাসিনা সরকারকে।
ভারতীয় সময় বিকাল ৩টা নাগাদ বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টার চেপে আগরতলার মিলিটারি এয়ারবেস পৌঁছান। ক্যাপ্টেন আব্বাস ওই হেলিকপ্টার নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে ৬/৮টি বড় সুটকেস সঙ্গে নিয়ে আসেন হাসিনা। ভারতীয় সময় রাত ৯টায় এ সংবাদ ঢাকায় পাঠানো পর্যন্ত দিল্লির লাগোয়া হিন্ডন এয়ারবেসেই বোনকে নিয়ে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। ডিনার ও অন্যান্য ব্যবস্থা করেছেন ভারতীয় সামরিক অফিসাররা। অন্যদিকে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতার উপদূতাবাসের সব কর্মকর্তা কার্যত ‘উধাও’ হয়ে গেছেন। কেউই হয় ফোন ধরছেন না, নয়তো মোবাইল সুইস অফ রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে রেল, বিমান ও সড়ক যোগাযোগ আপাতত বন্ধ রেখেছে ভারত সরকার। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ, প্রায় ৬ হাজার ভারতীয় এখন বাংলাদেশে আটকে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দিল্লির সাউথ ব্লকে বাংলাদেশ ডেস্ক রাতেও সক্রিয় রয়েছে। কলকাতায় আটকে পড়া বাংলাদেশিরা খুবই উদ্বিগ্ন, কীভাবে দেশে ফিরবেন বলে।