ভারতে ‘উদ্বাস্তু’ শেখ হাসিনা, কী ভাবছে মোদি সরকার?

ভারতে ‘উদ্বাস্তু’ শেখ হাসিনা, কী ভাবছে মোদি সরকার?

জাতীয় স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ ৯:১১ পূর্বাহ্ণ

গণবিপ্লবের মুখে বাংলাদেশের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়েছিলেন ভারতে। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানাও। পদত্যাগ করে পালানোর দিনটি ছিল ৫ আগস্ট। এরপর দেশটিতে অবস্থানের ৪৫ দিন পার হয়ে গেছে।

কূটনৈতিক পাসপোর্টের ক্ষমতাবলে দেড় মাস বা ৪৫ দিন বৈধভাবে অবস্থানের কথা ছিল। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে বলে জানা যায়। সে হিসেবে ওই ৪৫ দিন বৈধ ছিল কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তবে, হাসিনা পালিয়ে যাওয়া থেকে ভারতের পক্ষে তাকে নিয়ে খুব অল্প কথা বলা হয়েছে।

৬ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, খুব কম সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনা ভারতে এসেছেন। এরপর গত মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে বাংলাদেশ বিষয়ে ‘দেশটিতে কী ঘটেছে তা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়’ উল্লেখ করে সুসম্পর্ক রাখার বিষয়ে অভিমত জানালেও শেখ হাসিনার বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি।

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে ভারতীয় আরেকটি গণমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার প্রায় এক মাস পর, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বলেছে যে, তারা সহিংস বিক্ষোভের পর গত মাসে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়—বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) প্রধান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবো।

যদিও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার পর তিনি দেশে ফিরবেন বা ফিরতে পারবেন বা ফেরানো যাবে?—এমন নানা প্রশ্ন ওঠে নানা মাধ্যমে। যদিও আইসিটি প্রধান প্রসিকিউটর ফরাসি গণমাধ্যম এএফপিকে জানিয়েছিল, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধ প্রত্যার্পণ চুক্তি রয়েছে, যা ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

তবে, পাকিস্তানের জিও টিভিসহ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ধারণা দিয়েছে যে, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, কী ধরনের সিদ্ধান্তের পথে যাবে দেশটি, তা নির্ভর করছে তাদের ওপর।

এদিকে গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, আদালত বললে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তিনি এখন কোন স্ট্যাটাসে ভারতে আছেন—এমন প্রশ্নে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা কী স্ট্যাটাসে আছেন, সেটা ভারতকেই জিজ্ঞাসা করুন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আদালত যদি বলেন, তখন শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে উদ্যোগ নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারত দেবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। তবে চাইলে দিতেই পারে ভারত।

গত ৫ সেপ্টেম্বর দ্য হিন্দু তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত।

অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনা বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবৃতিকে ‘অবন্ধুসুলভ’ বলে আখ্যায়িত করেন বলেন, ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানে কেউ স্বস্তিতে নেই। কেননা, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আমরা তাকে দেশে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে থাকছেন এবং একই সময় কথা বলছেন; যা সমস্যা তৈরি করছে। তিনি যদি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা (বিষয়টি) ভুলে যেতাম; লোকজনও ভুলে যেতেন; কারণ তিনি নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু ভারতে বসে তিনি কথাবার্তা বলছেন ও নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কেউ এটা পছন্দ করছেন না।

তিনি বলেন, আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি, তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ। তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমন নয়- তিনি স্বাভাবিক পথেই সেখানে গেছেন। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি সেখানে গেছেন।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এনডিটিভিকে বলেন, দেশটিতে কী ঘটেছে তা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশি। আমাদের দিক দিয়ে আমরা আগের মতোই সম্পর্ক রেখে চলতে চায়। দুদেশের মধ্যে ভালো বাণিজ্য আছে…জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক আছে…আমি এভাবেই সম্পর্ক রাখতে চাই।

এদিন শেখ হাসিনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি জয়শঙ্কর। আবার ভারত ছাড়া কোনো দেশে যাবেন তিনি তাও জানা যায়নি। তবে, যুক্তরাজ্য তাকে নিতে রাজি হয়নি।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে মন্তব্য করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট আজ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, অনেক নেতা দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যান। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও যদি তিনি দেশের বাইরে থাকেন, তবে তাকে বাইরে থাকতে দিন। আমরা সবাই চাই বাংলাদেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *