কাশ্মীরে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদীরা কি অনুপ্রবেশকারী?

কাশ্মীরে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদীরা কি অনুপ্রবেশকারী?

আন্তর্জাতিক

নভেম্বর ২, ২০২৪ ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

জম্মু ও কাশ্মীরে পরপর সাতটি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। গত ২০ দিনের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটেছে। সদ্যসমাপ্ত বিধান সভা নির্বাচনের পর আবার কেন সন্ত্রাসবাদীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে?

এ বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক ডিআইজি এসপি বেইদ বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আইএসআই রাজৌরি পুঞ্চ থেকে অনুপ্রবেশ শুরু করে। কিছু মানুষকে অনুপ্রবেশ করায়। এর মধ্যে পাকিস্তানের সেনার লোক আছে। এসএসজি কমান্ডো আছে, যারা জঙ্গলে লড়াই করার ক্ষেত্রে খুবই দক্ষ।

সাবেক ডিআইজির সঙ্গে এ বিষয়ে একমত ডিডব্লিউর এবি রউফ গনি বলেন, যারা সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মারা গেছে, তারা সবাই বিদেশি। তাই অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমাদের সামনে অনুপ্রবেশ বাড়ার কোনো তথ্য নেই। তবে এখন যে সন্ত্রাসবাদীরা সক্রিয় হয়েছে, তারা স্থানীয় মানুষ নয়। বরং তারা পাকিস্তান থেকেই এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই অনুপ্রবেশ বাড়ার কথাটা উঠছে।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, পাকিস্তানের ঘরোয়া পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, তাদের কাশ্মীর নীতিতে কোনো বদল হয়নি। বরং তারা আরো বেশি করে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করিয়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়িয়েছে।

তার মতে, এই চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান করে আসছে। মাঝখানে তারা স্থানীয় মানুষকে দিয়ে এ কাজ করাবার চেষ্টা করেছে। এখন আবার তারা অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের ঢুকিয়ে এ কাজ করছে। সম্ভবত পাকিস্তানও তাদের ঘরোয়া বিষয় থেকে দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে চায়। আর তারা দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরে অস্থিরতা তৈরি করে ভারতকে বিপাকে ফেলতে চাইছে।

ডিডাব্লিউ উর্দুর সাংবাদিক সালাহউদ্দিন জৈন বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীরা এটা দেখাতে চাইছে যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সমস্যা থেকেই গেছে।

২০ দিনে যেসব ঘটনা ঘটেছে

গত সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের আখনুরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে সেনা অ্যাম্বুলেন্সে গুলি চালায় তিনজন সন্ত্রাসী। বালতাল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে কাছের একটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। তারপর সেখানে শুরু হয় সেনা অভিযান। সোমবারই একজন সন্ত্রাসী নিহত হয়। এরপর মঙ্গলবার সকালে দুই সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে।

গত সপ্তাহে গুলমার্গে সেনার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। দুইজন সেনা জওয়ান ও দুই মালবাহক আহত হন। পরে হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়। এই আক্রমণের কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলওয়ামার ত্রালে বাইরের রাজ্যের এক শ্রমিককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। সেই শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন।

তার কিছুদিন আগে সোনমার্গে নির্মীয়মান একটি টানেলের কাছে সড়ক নির্মাণ সংস্থার সাইটে ঢুকে গুলি চালিয়ে ছয়জন বাইরের রাজ্য থেকে আসা শ্রমিক ও একজন কাশ্মীরি চিকিৎসককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

গত ১৮ অক্টোবর সোপিয়ানে বিহার থেকে আসা এক শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসবাদীরা। তার দেহে ১২টি বুলেট লেগেছিল। একটি ক্ষেতে তার দেহ পড়েছিল।

গত ৯ অক্টোবর দুই সেনা কর্মীকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যজনের বুলেটবিদ্ধ দেহ পরে উদ্ধার করা হয়।

সদ্যসমাপ্ত বিধান সভা নির্বাচনের পর জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর একাধিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে ওমর আবদুল্লা বলেছেন, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি কঠোরতম ভাষায় এ হামলার নিন্দা করছেন।

গুলমার্গে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর কংগ্রেস বলেছে, এনডিএর ব্যর্থ নীতির জন্য এ অবস্থা হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, কেন্দ্রে এনডিএ সরকার জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অবিলম্বে এর দায় নিতে হবে এবং সেনা, নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হবে।

সূত্র: পিটিআই, এএনআই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *