এপ্রিল ১৯, ২০২২ ৯:২২ পূর্বাহ্ণ
রোজা পালনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন আছে। এই নিয়ম-কানুনগুলো সাধারণত সবাই জানেন। প্রতি বছর রমজান মাসে রোজার নিয়ম-কানুনগুলো বক্তৃতা এবং লেখার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই এ বিষয়গুলো মানুষের কাছে খুব পরিস্কার। এখানে ওসব বিষয়ের উপর আলোচনা করা হবে যা রোজার আত্মা অর্থাৎ স্পিরিটের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কুরআনে রোজার আদেশ সুরা বাকারায় বর্ণিত হয়েছে। সেই আদেশের শুরু এই আয়াত দিয়ে হয়েছে আয়াতটি হলো: يٰٓـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَۙ
অর্থাৎ হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা সৎকর্মশীল বা ন্যায়নিষ্ট হতে পারো (২: ১৮৩)।
এ থেকে জানা যায় যে রোজা প্রতিটি যুগে আল্লাহর আইনের একটি অঙ্গ ছিল। আজ, যখন কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে, মনে হয় সে যেন ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার অংশ হয়ে গেছে যা প্রতিটি যুগের বিশ্বাসীদের মধ্যে অব্যাহত ছিল এবং প্রতিটি যুগে তা অব্যাহত থাকবে।
রোজাদার ব্যক্তি মনে মনে এই মর্মে সন্তুষ্টি বোধ করে যে, সে আল্লাহর উত্তম ও গ্রহণযোগ্য বান্দাগণ যুগে যুগে যা করেছেন তা সে করছে। এই উপলব্ধি তাকে মানব ইতিহাসের আল্লাহ কেন্দ্রিক সেই কাফেলার অন্তর্ভুক্ত করে, যে কাফেলায় আছেন নবীগণ, সত্যবাদীগণ, শহীদগণ অর্থাৎ যারা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সত্যের সাক্ষ্যী দিয়েছেন এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ (৪: ৬৯)।
রোজার নির্দেশ চান্দ্র ক্যালেন্ডারের ওপর ভিত্তি করে এসেছে। শাবান মাসের শেষ সন্ধ্যায় পরবর্তী মাসের চাঁদ দেখে রোজা শুরু হয়। এভাবে রোজার কার্যক্রম শাবান মাসের শেষ থেকে শুরু হয়ে যায়। লোকেরা শাবানের শেষ তারিখ গণনা করা শুরু করে যাতে তারা সেদিন চাঁদ দেখতে পায় এবং রমজানের আগমনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চাঁদ দেখে রোজা রাখা সেটা এমন যেন রোজা রাখার আগে একজন ব্যক্তির মধ্যে রোজার মনোভাব জাগ্রত করা।
রোজার প্রতিটি মুহূর্ত আমলের। এটি বিশেষ ধর্মীয় আমলের সময়। এই সময়টি শুরু হয় শাবানের সন্ধ্যায়। শাবান মাসের ২৯তম সন্ধ্যা আসার সাথে সাথে মুমিনদের চোখ চাঁদ দেখার জন্য আকাশে স্থির হয়ে যায়। তাদের চেতনা এটা জানার জন্য জাগ্রত হয় যে, চাঁদ পৃথিবীর আবর্তনের সেই পর্যায়ে প্রবেশ করেছে কিনা, যখন থেকে অবশ্যই তাদের জীবনের গতিপথটি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে।
এখন প্রতিদিন তাদেরকে এটা জানার জন্য উদ্বিগ্ন হতে হবে যে, ঠিক কখন সকাল শুরু হবে এবং সূর্য ক’টা বেজে কত মিনিটে অস্ত যাবে, কেননা প্রতিদিন তাদের জন্য এই কথার ঘোষণা হয় যে এখন তাদের জীবন ব্যবস্থায় সময়ের সদ্ব্যবহার করে চলতে হবে।
রোজার আগে যখন তার খিদে পেত তখন সে খাবার খেত, পিপাসার সময় পানি পান করত। যেন বাকি দিনগুলিতে ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা তাদের গাইড ছিল তবে এখন অনুশাসন তাদের জীবনের গাইড হয়ে গেছে। এখন তাদের খুব ভালভাবে জানতে হবে রাতে ক’টা বেজে কত মিনিট পর্যন্ত খাওয়া উচিত। এর পরে পুরোপুরি খাওয়া এবং পান করা বন্ধ করতে হবে এবং তারপরে সন্ধ্যায় সঠিক সময়ে আবার খাওয়া দাওয়া শুরু করতে হবে।
ঠিক একইভাবে, যখনই সত্যিকারের রোজাদারকে মন্দ কিছু বলা হয়, তখন সে তার প্রতিক্রিয়া জানায় না, তবে বলে, ‘আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আপনি আমাকে খারাপ বলেছিলেন বলে আমি আপনার প্রতি খারাপ ব্যবহার করব না।’ কারণ আমি রোজায় আছি।
যে দিনগুলি কোনও সতর্কতা বা ভয় ছাড়াই কেটে যেত, এখন তাদেরকে এই জীবনবোধের সঙ্গে দিনগুলি কাটাতে হয় যে, তাদের কি করা উচিত, এবং কি না করা উচিত, কী খাবেন এবং কী খাবেন না, এটি করবেন না, না হলে রোজা ভেঙে যাবে, এটি করবেন না, অন্যথায় আপনি রোজার পরেও রোজা রাখবেন।
রোজা একজন ব্যক্তির জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া। রোজার দিনগুলোতে একজন ব্যক্তি তার সমস্ত সময় প্রশিক্ষণে ব্যয় করেন এবং জানতে চান একজন মানুষের সীমারেখা, সে কতদূর যেতে পারে, এবং কোথায় যেতে পারে না, কীভাবে থাকা উচিৎ হবে এবং কীভাবে থাকা উচিৎ নয়।
রোজার উদ্দেশ্য হলো একজন ব্যক্তির প্রতিদিনের রুটিনে ‘আপনি কি করতে পারবেন এবং কি করতে পারবেন না’ এর বিষয়টি উত্থাপন করে তার স্থায়ী মানসিকতা তৈরি করা। এটি নীতিগত জীবনের প্রশিক্ষণ আর এই ধরনের নীতিগত জীবন এক মুমিনের সারা জীবনের জন্য প্রয়োজন।