‘মুসতাজাবুদ দাওয়াহ’র দোয়া সবসময় কবুল করা হয়। এমন ব্যক্তিদেরকে মুসতাজাবুদ দাওয়াহ বলা হয়, যার দোয়া করতে দেরি; সে দোয়া কবুল হতে দেরি হয় না। ‘মুসতাজাবুদ দাওয়াহ’ হিসেবে নিজেকে তৈরির অন্যতম আমল হলো আঠার মতো ইসতেগফারের সঙ্গে লেগে থাকা এবং হালাল বস্তু ভক্ষণ করা। প্রত্যেক ফরজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়া ছাড়াও নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা মুসতাজাবুদ দাওয়াহ হয়ে যান।
আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। তাই অনেকে সবসময় পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকেও মুসতাজাবুদ দাওয়াহ মনে করেন। তাদের মতে, কোনো ব্যক্তি যখন সমস্যাগ্রস্ত হয়ে অজুর মাধ্যমে পবিত্র হয়ে আল্লাহর কাছে একান্ত মনে প্রার্থনা করেন, তবে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির দোয়া কবুল করে নেন।
প্রবল বিশ্বাস নিয়ে নবীজির উপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন মুসতাজাবুদ দাওয়াহ। তবে, তারা ছাড়াও এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যাদের দোয়া আল্লাহ তাআলা সবসময় কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) এমন ৬ শ্রেণির কথা হাদিসে উল্লেখ করেছেন; যাদের দোয়া কখনও ফেরত দেওয়া হয় না। এসব ব্যক্তিরা হলেন-
১. অসুস্থ ব্যক্তি
অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করে থাকেন। অসুস্থতার সময় আল্লাহ তাআলা মানুষের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁকে বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে, তাকে বলবে তোমার জন্য দোয়া করতে। কেননা, তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতো।’(সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪১)
২. রোজা পালনকারী
রোজা রাখা অবস্থায় দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করে নেন। রোজা রেখে দোয়া করা মানুষের জন্য উপযুক্ত সময়। নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা ফেরত দেন না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাষক। ২. সিয়াম আদায়কারী, যতক্ষণ না সে ইফতার করে। ৩. মজলুম ব্যক্তির দোয়া। (মুসনাদে আহমদ: ৯৭০৪)
৩. বাবার দোয়া
সন্তানের জন্য বাবার দোয়া। সাধারণত মায়েরাই সন্তানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করে থাকেন। মায়ের তুলনায় বাবারা দোয়া করেন কম। কিন্তু কোনো বাবা যদি সন্তানের জন্য বদ-দোয়া করেন আল্লাহ তাআলা তা ফেরত দেন না। সেকারণে সন্তানের জন্য জরুরি হলো বাবার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। বাবার মন সন্তুষ্ট থাকলে সন্তানের জন্য এমনিতেই রহমত ও কল্যাণ নাজিল হয়। হাদিসে এসেছে- ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অগ্রাহ্য করা হয় না (বরং কবুল করা হয়); পিতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৫; সিলসিলাতুস সহিহা, আলবানি: ১৭৯৭)
৪. অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দোয়া
কেউ অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে, তা দ্রুত কবুল হয়। আল্লাহ তাআলা এ দোয়া কখনো ফেরত দেন না। হাদিসে এসেছে-
‘সত্ত্বর কবুল হওয়ার মতো দোয়া হলো এক অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য অপর অনুপস্থিত ব্যক্তির দোয়া।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, আদাবুল মুফরাদ:৬২৭)
৫. মজলুম ব্যক্তির দোয়া
যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠীর দ্বারা জুলুমের স্বীকার হয়; তবে ওই ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। তাই সামান্য অসাবধানতার কারণে যেন কারো ওপর জুলুম করা না হয়। মজলুমের আর্তনাদ আল্লাহর কাছে পৌঁছতে পর্দা ভেদ করতে হয় না।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) যখন মুআজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠান, তাকে বলেন, ‘মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মধ্যে পর্দা থাকে না।’(বুখারি: ২৪৪৮)
মানবতার বিচারে জুলুম এতই অপছন্দনীয় যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজের জন্যও এটি হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম: ৬৭৩৭)
৬. মুসাফিরের দোয়া
যে ব্যক্তি সফরে থাকেন, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন-
তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়। ১. সন্তানের জন্য পিতার দোয়া। ২. মুসাফিরের দোয়া। ৩. মজলুমের দোয়া। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৫; সুনানে তিরমিজি: ৩৫০৯)
তবে, মুমিনের দোয়ামাত্রই বরকতপূর্ণ আমল। তাদের দোয়া সঙ্গে সঙ্গে কবুল না হলেও কখনো বিফলে যায় না। হাদিসে আছে, ‘যখন কোনো মুসলমান দোয়া করে, যদি তার দোয়ায় গুনাহের কাজ কিংবা সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন না থাকে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তিনটি প্রতিদানের যেকোনো একটি অবশ্যই দান করেন। সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কবুল করেন এবং তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস দিয়ে দেন। দোয়ার কারণে কোনো অকল্যাণ বা বিপদ থেকে হেফাজত করেন। তার আখিরাতের কল্যাণের জন্য তা জমা করে রাখেন। ’ (আহমদ: ১১১৪৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দেশনাগুলো মেনে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। হাদিসগুলোর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।