ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সারা বিশ্বের অধিকারবিষয়ক সংস্থা। ৩ আগস্ট দিনটি ইসরায়েলি মানবাধিকার লঙ্ঘন, ফিলিস্তিনি বন্দীদের অধিকার লঙ্ঘন এবং গাজায় অব্যাহত গণহত্যা তুলে ধরার জন্য পালিত হয়। দখলদার ইসরায়েলের কারাগারে গোপনীয়তার মধ্যে নিপীড়ন এবং নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয়।
গত বছরের গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিরা ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যেই অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি বন্ধ করে দিয়ে কার্যকরভাবে গণহত্যা শুরু করা হয়। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দি ও বন্দিদের বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধ শুরু করেছেন। ইসরায়েলি কারাগার এবং ক্যাম্পে ‘অতি ভিড়’ নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমনটি কার্যকর করেছেন তিনি।
জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর থেকেই, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী। এই দুই অঞ্চল থেকে বন্দী ফিলিস্তিনি নাগরিকের সংখ্যা ৯ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে অন্তত ৩৩৫ নারী ও ৬৮০ শিশু রয়েছে। তিন হাজার ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে প্রশাসনিকভাবে আটকে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের কোনো অভিযোগ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জন নারী ও ৪০ জন শিশু রয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে এত বেশি সংখ্যক প্রশাসনিক বন্দি আর কখনও দেখা যায়নি।
ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অসংখ্য ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে, সম্ভবত এই সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের ২০০২ সালের ‘অবৈধ যোদ্ধা আইনের কারাদন্ড’ এর অধীনে বন্দী করা হয়, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে আটকের আদেশ জারি না করেই যে কোন মানুষকে আটক করার অনুমতি দেয়।
এর আগে, নেগেভ মরুভূমির একটি কারাগার থেকে নিপীড়ন ও নির্যাতনের ভয়াবহ অভিযোগের পর ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত সৈন্যদের জবাবদিহিতা এবং বিচারের আওতায় আনার আহ্বানও জানিয়েছেন।
দক্ষিণ ইসরায়েলে অবস্থিত এসডি টাইমান কারাগারটি মূলত একটি সামরিক স্থাপনা, যা গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বিনা বিচারে আটক রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে।বন্দীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত এই বন্দিশালাটি সোমবার ফের আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে যখন স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে সেখানে এক ফিলিস্তিনি বন্দী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা পালা করে তাকে ধর্ষণ করেন। এতে করে তিনি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ঘটনার পর নয় সেনাকে আটক করা হয় এবং দেশটির সামরিক পুলিশ তদন্ত শুরু করে। বন্দিশালায় নিপীড়ন এবং ইসরায়েলি সেনাদের কর্মের সমালোচনা করে ইসরায়েলি বিশ্লেষক শায়েল বেন-এফ্রাইম এটি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি এমন সামরিক স্থাপনা যা বন্ধ করতে হবে। এটি বন্ধ করতেই হবে।’
বন্দী নির্যাতন
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এসডি টাইমান প্রিজন ফিলিস্তিনি বন্দীদের গণহারে নির্যাতনের কারণে প্রতিনিয়ত সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৩৬ ফিলিস্তিনি কারাগারে মারা গেছেন।
বেন-এফ্রাইম, যিনি এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছিলেন, তিনি বলেন, এই স্থাপনাটি অন্যান্য কুখ্যাত বন্দিশালার মতোই ছিল।মূলত, এই স্থাপনা পরিচালনার জন্য কোন আইন ছিল না।
তিনি বলেছিলেন, এসডি টাইমানে ইসরায়েলি সেনারা এমন সব ব্যাবিচার, নিপীড়ন করেছে যেমনটি মার্কিন সেনারা করেছিলেন আবুঘারিব বা গুয়ানতানামোবে কারাগারে। এটি খুব মনে করিয়ে দেয়।
বন্দীদের অবস্থার বিষয়ে বিশ্লেষক বলেন, তাদের চোখ বেঁধে বসিয়ে রাখা হয় দিনে কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা। সম্ভবত দিনে চার থেকে ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে করে অনেক বন্দির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
সূত্র: আল-জাজিরা