ইসরায়েলি সেনাদের লেলিয়ে দেওয়া কুকুরের আক্রমণে মারা গেছে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত তথা এক শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণ। গাজা উপত্যকার সুজাইয়াতে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সী ওই তরুণের নাম মোহাম্মদ বাহর। সে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকত। সে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল। তরুণটি কথা বলা থেকে শুরু করে কিছুই করতে পারত না।
মোহাম্মদ বাহরের মা নাবিলা আহমেদ বলেছেন, গত ২৭ জুন থেকে সুজাইয়াতে দখলদার ইসরায়েলের সেনারা ব্যাপক হামলা চালায়। ওই দিন থেকে নিজেদের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন তারা। কিন্তু একদিন তাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় ইসরায়েলিরা। এসেই প্রথমে একটি কুকুরকে বাড়ির ভেতর ছেড়ে দেয়। ওই কুকুরটি মোহাম্মদকে কামড়ে ধরে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।
নিহত ওই ফিলিস্তিনি তরুণের মায়ের আক্ষেপ, প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও মোহাম্মদকে ছেড়ে দেয়নি তারা। সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আলাদা একটি রুমে নিয়ে যায়। সেখানে কুকুর লেলিয়ে দেয় তারা। ওই সময় সেই রুম থেকে প্রচণ্ড চিৎকার করছিল মোহাম্মদ।
ইসরায়েলিরা সুজাইয়া থেকে চলে যাওয়ার পর গত বুধবার মোহাম্মদের পরিবার দ্রুত তাদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান বাড়িতে পড়ে আছে তার গলিত মরদেহ। এ ছাড়া তারা দেখতে পান, মোহাম্মদের মুখমণ্ডল পোকামাকড়ে খাচ্ছিল।
মোহাম্মদের মা নাবিলা আহমেদ বলেন, ‘তার চিৎকার এবং কুকুর থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টার যে চিত্র আমি দেখেছি তা ভুলতে পারছি না।’
মুহাম্মদে ৭১ বছর বয়সী মা জানিয়েছেন, ইসরায়েলিদের হামলার সময় তারা বাড়িতে ১৬ জন ছিলেন। যার মধ্যে তার দুই ছেলে, তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা ছিল। ইসরায়েলিদের ছোড়া বোমা যেন গায়ে আঘাত না হানে সেজন্য শিশুরা বাথরুমে অবস্থান করছিল। কিন্তু মুহাম্মদকে ঘরের ভেতরই রেখেছিলেন তারা। ফলে কুকুরটি প্রবেশ করে তাকে প্রথমে কামড়ে ধরে।
তার মা বলেছেন, কুকুরটি তার বুকে কামড় দেয়। এরপর হাত কামড়ে ধরে সেটি ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। মুহাম্মদ চিৎকার করছিল আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল। ওই সময় তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
কুকুর যখন হামলা করে তখন তিনি ইসরায়েলি সেনাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন তার ছেলে প্রতিবন্ধী। একটা সময় কুকুরটিকে ছাড়ায় তারা। কিন্তু মুহাম্মদকে নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা রুমে। তার মা তাকে ছেড়ে দিতে বললেও দেওয়া হয়নি। এর বদলে ওই রুমে একজন চিকিৎসক প্রবেশ করে তাকে চেতনাশক প্রয়োগ করে। এরপর আর মুহাম্মদের কোনো কথা বা চিৎকার শুনতে পাওয়া যায়নি।
তার মা জানিয়েছেন, এক সৈন্যকে তিনি জিজ্ঞেস করেন মুহাম্মদ কোথায়। জবাবে সে বলে মুহাম্মদ আর নেই।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই