শওকত আলী হাজারী ।।
গাজ্জায় তুফানে আকসার ১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশে জায়নবাদী আগ্রাসন : আমাদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব প্রফেসর ড. আহমদ আব্দুল কাদের।
মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর ২০২৪ খি: ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হুসেন চৌধুরী হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফিলস্তিন ওলামা পরিষদ বাংলাদেশ কো অর্ডিনেটর ও ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মুহাইমিনুল হাসান রিয়াদ।
আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম সভাপতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। সাইয়্যেদ মাহফুজ খন্দকার সম্পাদক, ইনসাফ২৪.কম। শেখ ফজলুল করীম মারুফ, মাহিন সরকার ও মহিউদ্দিন রনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জামিল সিদ্দিকী, সৈয়দ শামসুল হুদা ও জামালুদ্দিন মুহাম্মদ খালিদ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের মূল আলোচ্য বিষয় ছিলোঃ
পাসপোর্ট EXCEPT ISRAEL শব্দদুটি পুনর্বহাল করতে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করা।
জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ফিলিস্তিনের মানচিত্রের সঠিক উপস্থাপন ও মসজিদে আকসাকে মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র হারাম হিসেবে উপস্থাপন করা।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের প্রথমে জানতে হবে তুফানে আকসা কী_ গাজ্জা তথা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মসজিদে আকসার বিকৃতি প্রতিহত করা, ফিলিস্তিনী জনগনের ওপর চলমান গুম খুন গণহত্যা ধর্ষণ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা এক আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধ মূলক সশস্ত্র অপারেশনের নাম তুফানে আকসা।
তিনি বলেন, কেন ৭ ই অক্টোবর এ হামলা? ২০১৯ সালে বিতর্কিত ডীল অব সেঞ্চুরি (সন্ত্রাসী আমেরিকা কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া ফিলিস্তিন বিক্রির দলীলপত্র) হওয়ার পর ফিলিস্তিনিরা প্রত্যাখ্যান করে, তীব্রভাবে শুরু হয় ইজরায়েলের বর্বরতা! মুসলিম শাসকদের কিনতে শুরু করে, কুটনৈতিক অপতৎপরতায় মেতে ওঠে, আরব আমিরাত ও বাহরাইন থেকে স্বীকৃতি আদায় করে, পরোক্ষভাবে অনেক আরব শাসক ইজরায়েলে পায়ে বিছিয়ে দেয় গোলামীর কার্পেট। এদিকে পশ্চিম তীর, গাজ্জা ও দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে জেল-জুলুম,ভিটা উচ্ছেদের মাত্রা নজিরবিহীন হয়ে পড়ে, দখল করে মহামূল্যবান মসজিদে ইব্রাহীম আল খলিল, মসজিদে আকসা ভাসছে নিরীহ মুসল্লীদের রক্তে, ইহুদী অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে এই আল কুদসে, টার্গেট তাদের থার্ড ট্যাম্পল নির্মাণ। সর্বপরি দেওয়ালে পীঠ ঠেকে যায়। ফিলিস্তিনবাসীর, সময়ের এই প্রতিরোধী দাবী জন্ম দিয়েছে তুফানে আকসার।
মুহাইমিনুল হাসান বাংলাদেশে জায়নবাদী আগ্রাসন উল্লেখ করে বলেন, আগ্রাসন বলতে আমার বাংলাদেশে জায়নবাদীদের পক্ষে কিছু ঘটনা প্রবাহকে বুঝি। ইজরাঈলের কুটনৈতিক অপতৎপরতার বড় অস্ত্র হল পেগাসাস স্পাইওয়্যার আর বাংলাদেশ ইজরায়েল থেকে (তৃতীয় পক্ষ ব্যবহার করে) মোবাইলে আড়িপাতার এই যন্ত্র ক্রয় করে! এছড়াও নানা মাধ্যমে এনটিএমসি বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্রয় করেছে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে ইজরায়েলী সেনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের সেনাকর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নেয়! দেশের পাসপোর্ট থেকে “EXCEPT ISRAEL শব্দদুটি বাতিল করা, আন্তর্জাতিক সূচকে দেশের পাসপোর্টের মান বৃদ্ধির মিথ্যা অজুহাত দিলেও পরবর্তীতে দেখা যায় আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান কমেছে! এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য জনমনে আরোও উদ্বেগের কারণ হয়।
তিনি দাবী করেন, বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে ফিলিস্তিনের মানচিত্রকে ইজরাইলের মানচিত্র বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মত ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে! [নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে] ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সাথে ইজরাঈলের সম্পর্ক কেমন ছিল? ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক এইড পাঠানোর প্রস্তাব করেছি ইজরাঈল, মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ৭২ সালে প্রথম দিকেই স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ইজরাঈল, তদানিন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ তা প্রত্যাখ্যান করে চিঠি রিলিজ করেন। আশির দশকে হাজারো বাংলাদেশী ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয়, শতাধিক মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন। এখনো লেবাননে রয়েছে শহীদ কামাল মোস্তফা আলী এর কবর।
আমাদের করণীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ইজরাঈলের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে তা বের করা। কেন পাসপোর্ট থেকে EXCEPT ISRAEL বাতিল করা। হয়েছিল তার জবাব রাষ্ট্র থেকে আদায় করা পাসপোর্ট EXCEPT ISRAEL শব্দদুটি পুনর্বহাল করতে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করা। জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ফিলিস্তিনের মানচিত্রের সঠিক উপস্থাপন ও মসজিদে আকসাকে মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র হারাম হিসেবে উপস্থাপন করা। *ভবিষ্যতেও যে কোন জায়নবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধে সোচ্চার থাকা। স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা। আর্থিক ও সামরিক এইড দিয়ে তাদের পাশে দাড়ানো। প্রয়োজনে সশস্ত্র লড়াইয়ে সেনা বাহিনী প্রেরণ করা।