রৌমারীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় এক যুবকের মৃত্যু

দেশজুড়ে

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫ ১:৩৯ অপরাহ্ণ

আবুল কালাম আজাদ রৌমারী প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলাতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় শাহাদত হোসেন (৩২) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর গ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহাদত। নিহত শাহাদত ধনারচর গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে। এ ঘটনায় ৩ নারীকে আটক করেছে পুলিশ। রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জমি বিরোধ প্রতিপক্ষের হামলায় শাহাদতের দুই বোন ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী গুরুতর আহত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শাহাদতসহ তাদেরকে লাঠিসোটা, শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর আঘাত ও জখম করা হয়েছে। সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। বাড়ির পাশের একটি জমি নিয়ে একই গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল। নিহত শাহাদতের ভাতিজা রুবেল জানায়, জমিটিতে শাহাদতের পরিবার কয়েক বছর ধরে চাষাবাদ করছেন।

এ বছর সরিষা লাগানো হয়েছে। মঙ্গলবার আবুল হোসেন তার ছেলেদের সঙ্গে আরও শতাধিক লোক নিয়ে জমির সরিষা তুলে নিতে যান। বাড়িতে অন্য কোনও পুরুষ মানুষ না থাকায় ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের কাছে শাহাদত সাহায্য চান। দুই কনস্টেবলকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান রৌমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খুকিন চন্দ্র। পুলিশের ডাকে শাহাদত বের হয়ে আসেন। তাদের সামনেই প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠিসোটা, শাবল-বল্লম দেশীয় অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে শাহাদতকে গুরুতর আহত জখম করে। এ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী ও বোনসহ পরিবারের লোকজন এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।

সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারী-পুরুষসহ অন্তত ১৭ জন আহত হন। ঘটনার সময় পুলিশ নির্বিকার ছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল ৬টায় শাহাদত মৃত্যুবরণ করেন ।

এদিকে, শাহাদতের মৃত্যুর খবরে বুধবার সকালে আবারও এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সহাকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল), রৌমারী থানার ওসিসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তারপর পুলিশ তোপের মুখে পড়ে। উত্তেজিত স্থায়ী জনতা পুলিশের এসআই খুকিনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় শাহাদতের বড় ভাই আজিজুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন এবং বলেন, আমরা এখন শুধু বিচারটা চাই।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আফরিনা আকতার, কুপিয়া বেগম ও আফরোজা বেগম নামে তিন নারীকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, ‘মামলা প্রক্রিয়াধীন। তিন নারীকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষের শতাধিক লোক ছিল। সে সময় তিন পুলিশ সদস্য কী করতে পারে? তারপরও আমি এসপি স্যারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন।’

সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নির্বিকার থাকা প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘এলাকাবাসী এমন অভিযোগ করেছে। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে।

রৌমারী উপজেলার ইউএনও উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, ‘বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কিছুটা উত্তেজনা রয়েছে। আমি সকল পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।