ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা ১৪৩১- এ গৃহীত সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষা

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫ ১:২২ অপরাহ্ণ

শওকত আলী হাজারী।।

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (১৮ মাঘ ১৪৩১) শনিবার প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে এ বছরের শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার আনুষ্ঠানিক পর্ব আরম্ভ হয়েছে। এ বছর জগন্নাথ হল অভ্যন্তরে হল প্রশাসনের পূজাসহ ৭৩ টি বিভাগ/ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। হল প্রশাসনের পূজা হলের উপাসনালয়ে এবং বিভাগ/ইনস্টিটিউটগুলোর পূজা হলের মাঠে স্থাপিত নিজস্ব মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে। মণ্ডপের স্থান নিধার্রণ করা হয়েছে প্রত্যেক বিভাগ/ইনস্টিটিউটের পূজা কমিটির উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে। পূজার সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে হল প্রশাসনের মোট ১১ টি উপ—কমিটি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার জগন্নাথ হল, এ অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা ১৪৩১— এ গৃহীত সার্বিক প্রস্তুতি স¤পর্কে উপস্থাপন করেন, দেবাশীষ পাল, প্রাধ্যক্ষ, জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সংবাদ সম্মেলনে , মিঠুন কুমার সাহা, অধ্যাপক, ডাঃ শিমল , পূজা কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গত জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দুদিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে পু®পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি, ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু—কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও বিশুদ্ধ খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আগত পুণ্যার্থীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ এক নতুন প্রেক্ষাপটে এ পূজার আয়োজন করতে চলেছি। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় আমরা জগন্নাথ হল প্রশাসন এবারের সরস্বতী পূজার প্রত্যেক আয়োজনের শুরু থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নানাবিধ সভাতে আমার সভাপতিত্বে আবাসিক শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ ও তাদের আশা—আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সুবিবেচনা করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন অর্থাৎ মাননীয় উপাচার্য, মাননীয় প্রো—উপাচার্য (প্রশাসন ও শিক্ষা), মাননীয় কোষাধ্যক্ষ ও মাননীয় প্রক্টর মহোদয়বৃন্দের সার্বক্ষণিক ও কার্যকর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জগন্নাথ হল প্রশাসন হল উপাসনালয়ে তথা পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে সমগ্র হল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কারিগরী সহায়তা দিয়ে আমাদের পাশে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), শাহবাগ থানা. ফায়ার সার্ভিস, বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সি। এজন্য আমরা জগন্নাথ হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

আমাদের সনাতন স¤প্রদায়ের ধর্মীয় সকল রীতি, আচার, প্রথা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল হয়েই আমরা এই পূজা আয়োজনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিখুঁতভাবে স¤পন্ন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি হল প্রশাসন হলের অভ্যন্তর ও তৎসংলগ্ন পারিপার্শ্বিক এলাকাতে পূজায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক প্রতিমা—দর্শন ও শিশু—কিশোরদের বিনোদনমূলক স্থাপনায় পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করার নিমিত্তে সবার জন্য অবশ্য অনুসরণীয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসম্বলিত লিফলেট বোর্ড বড় আকারে হলের প্রত্যেক প্রবেশদ্বারে ও উপাসনালয় সংলগ্ন স্থানে সহজে দৃশ্যমান করে টানানো হয়েছে। তন্মধ্যে সমগ্র জগন্নাথ হল সিসি ক্যামেরার আওতাধীন থাকবে; প্রবেশমুখে মেটাল ডিটেক্টরসহ অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে; ছোট শিশুদের দুগ্ধপানের জন্য বিশেষ নিরাপদ একটি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে; কোন ধরনের পটকা বা আতশবাজির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ স্টিকার সরবরাহ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হল প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভ থেকেই সকল ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতা প্রদর্শন করে আসছে। আমরা সর্বদাই সকল ধর্মের প্রতি সমান ও বৈষম্যহীন আচরণের মাধ্যমে এক সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক মূল্যবোধস¤পন্ন টেকসই সমাজ বিনির্মাণে সদা যত্নশীল। আমরা জগন্নাথ হল প্রশাসন আমাদের প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে সকল ধর্ম, মত, আদর্শ, শ্রেণি, পেশার মানুষকে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে এই শুক্লা পঞ্চমীর উৎসবে সুস্বাগত জানাচ্ছি। এ উৎসবে আগত সকল পুণ্যার্থীর শুভাগমনে জগন্নাথ হলকে স¤প্রীতির বন্ধনের এক অপূর্ব মিলনমেলায় রূপ দিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এ মাঙ্গলিক ও সর্বজনীন আয়োজনে আপনাদের সানুগ্রহ উপস্থিতি আমাদের হল পরিবারকে অনুপ্রাণিত করবে।