শেরপুরে সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ; গ্রামবাসীদের তুপের মুখে কাজ বন্ধ করে এলাকা ছেড়েছে ঠিকাদারের লোকজন

দেশজুড়ে

এপ্রিল ২৭, ২০২৫ ৫:৫৮ অপরাহ্ণ

ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি

শেরপুরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সেতু নির্মাণ কাজের অভিযোগে গ্রামবাসীদের তুপের মুখে কাজ বন্ধ করে এলাকা ছেড়েছে ঠিকাদারের লোকজন। ঘটনাটি ঘটে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাঁও এলাকায়।

গ্রামবাসীরা জানান, গৌরিপুর ইউনিয়নের বনগাঁও চতল ও জিগাতলা গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মহারশি নদীর উপর একটি সেতু না থাকায় প্রতিদিন হাজারো পথচারী যুগযুগ ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি উঠে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আশ্বাস ও পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবায়ীত হয়নি।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ কাজ হাতে নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি। ট্রেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার ও নিয়োগ করা হয়। জামাল পুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজটি পায়। যথারীতি কার্যাদাদেশও দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর থেকে। তবে শুরু থেকে নির্মাণ কাজ চলছিল ধীরগতিতে। ফলে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি নির্মান কাজ। পরে আবারও কাজের সময় সীমা বাড়িয়ে নেয়া হয় বলে জানা গেছে।

গত বছরের ৫ আগষ্টের পূর্বে নির্মানাধীন সেতুর নির্মাণ কাজের মান ভালো ছিলো বলে জানান গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ ৫ আগষ্টের পর সেতু নির্মাণ কাজে যোগ হয় স্থানীয় বিএনপিও সহযোগি সংগঠনের ফারুকসহ কতিপয় নেতা কর্মি। এ সময় থেকে তারা সেতু নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। সেতুর ‘বার’ নির্মাণে প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী চারটি রড দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। ৬ টি রিং দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দেয়া হয়নি। বালুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি মিশ্রণ বালু। আর সিমেন্ট প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। নিম্নমানের কাজ করায় নির্মান কাজ শেষ হতে না হতেই বার গুলি ভেঙে যাচ্ছে। ব্লক নির্মাণেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ । গারো পাহাড় থেকে সংগৃহিত নিম্নমানের পাথর এবং মাটির মিশ্রণে তৈরি বালু। ফলে ভেঙে যাচ্ছে ব্লক গুলো।

এছাড়া স্ল্যাব তৈরির সময় রড না দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে চিকন তার, যার সঙ্গে রয়েছে মাটি মেশানো বালু ও স্বল্প পরিমাণ সিমেন্ট। এভাবে তৈরি করা স্ল্যাব ইতোমধ্যে ব্রিজে স্থাপন করা হয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে গ্রামবাসীরা। ২২ এপ্রিল বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা নিম্নমানের সামগ্রিক ব্যবহার করে তৈরিকৃত বার,বল্ক ভাংচুর করে। এসময় ঠিকাদারের লোকজন সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে এলাকা ছাড়েন। এ বিষয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারের কোন লোকজনকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন ইদুল ফিতরের পর তাদের অজান্তেই কিছু কাজে আনিয়ম করলে স্থানীয়দের সাথে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের লোকদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ করে দিয়ে এলাকা ছাড়েন। তিনি বলেন নিম্নমানের কাজ করার কারনে কিছু ব্লক বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শেরপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এলাকাবাসী এ বিষয়ে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ঠ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন  তারা।