সাতক্ষীরায় যুব উন্নয়নের ড্রাইভিং কোর্সের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ইডির পকেটে

ইত্যাদি

জুলাই ৯, ২০২৪ ৪:২৭ অপরাহ্ণ

মনিরুজ্জামান মনি

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী (ইডি) মোস্তফা জামান শেখের বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীদের ভর্তির সময় উৎকোচ হিসেবে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, যানবাহন চালনা কোর্সে ভর্তির পর যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নির্বিঘেœ পেতে বিআরটিএ ম্যানেজ করা সহ বিভিন্ন অযুহাতে প্রশীক্ষণার্থীরে জন্য সরকার প্রদত্ত যাতায়াত ভাতাসহ বিভিন্ন খাতের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি এমন ধরনের বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ কোর্সের বিভিন্ন ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীরা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উচ্চমান সহকারী মোস্তফা জামান শেখের বিরুদ্ধে যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ কোর্সের দুর্নীতি ও ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এছাড়াও এসব দুর্নীতিতে যোগসাজশকারী হিসেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ কোর্সের আউটসোর্সিং ভিত্তিক প্রশিক্ষক আকুল এর বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি জানান তারা।
অভিযোগে বলা হয়, প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ভাতার ৬ হাজার টাকা দেওয়ার নামে খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে টাকা দিয়ে ছবি তুলে তা পুনরায় ফেরত নেন সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী মোস্তফা জামান শেখ। এছাড়া প্রতি ব্যাচে ২ থেকে ৩ জন প্রশিক্ষণার্থী আবাসিক সুবিধা নিলেও খাতা কলমে তা বেশি দেখিয়ে সরকারি আবাসিক খাতের টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এছাড়া নির্বাচিত প্রশিক্ষণার্থী হওয়া সত্তে¡ও প্রশিক্ষণ শুরুর দুই-একদিন পূর্বে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে ফোন করে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি ও আদায় করা হয়। এছাড়া অনলাইনে আবেদন ও লার্নারসহ প্রশিক্ষণার্থী প্রতি ১ হাজার ১ শত ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণার্থীদের যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত জ¦ালানী খরচ বাঁচিয়ে সেখান থেকে টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। ফলে প্রশিক্ষণার্থীরা যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে প্রকল্পভিত্তিক ব্যাচপ্রতি এক মাস মেয়দী যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হয়। যার প্রত্যেক ব্যাচে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসছেন। বর্তমানে জুলাই মাসে ২১তম ব্যাচ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।
সাতক্ষীরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সাতক্ষীরা যুব উন্নয়নের অধীনে ১ থেকে ১৪ তম ব্যাচ পর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণার্থী প্রতি (আবাসিক) ৭ হাজার টাকা এবং (অনাবাসিক) ৪ হাজার ৫শ টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়া পরবর্তী ব্যাচে প্রশিক্ষণার্থী প্রতি (আবাসিক) ৯ হাজার টাকা এবং (অনাবাসিক) ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সকল চালকদের দাবি ইতিপূর্বে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে তাদের কোন টাকা দেওয়া হয়নি, উল্টে তাদেরকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ মতে (অনাবাসিক হিসেবে) ১ থেকে ১৪ তম ব্যাচের মোট ৫৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য বরাদ্দের ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং পরবর্তী ১৫ থেকে ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত ২৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীর বরাদ্দের ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উচ্চমান সহকারী (ইডি) মোস্তফা জামান শেখ বিভিন্ন কৌশলে ও বিভিন্ন অযুহাত এবং বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করার নামে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া ১ থেকে ২০তম ব্যাচের মোট ৮০০ প্রশিক্ষণার্থীদের থেকে লার্নার বাবদ জনপ্রতি ১১৫০ টাকা (মোট ৯ লক্ষ ২০ হাজার) টাকা বাড়তি আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক কলারোয়া উপজেলার কয়লা গ্রামের মোঃ মুরাদ হোসেন জানান, ‘তিনি ১৪তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। ওই ব্যাচের প্রত্যেকের কাছ থেকে লার্নার বাবদ অতিরিক্ত ১১৫০ টাকা নেওয়া হয়েছিল’। তিনি আরো জানান, ‘আমাদের জনপ্রতি ৪ হাজার ৫শ টাকা সরকারি ভাতা বাবদ বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বিআরটিএ ম্যানেজ করার নামে আমাদেরকে টাকা গ্রহণের খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে সেই টাকা আমাদের হাতে দিয়ে ছবি তুলে নেয়। পরে সেই টাকা উচ্চমান সহকারী মোস্তফা জামান, প্রশিক্ষক আকুল এবং প্রশিক্ষক আজাদ আমাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়’। মুরাদ হোসেন আরো জানান, ‘ওই টাকা তাদেরকে ফেরত না দিলে লাইসেন্স না দেওয়ার হুমকি দেয়। এজন্য সে সময়ে আমরা কিছুই বলতে পারিনি। পরে আমাদের জন্য সরকারি বরাদ্দের জনপ্রতি আরো ২ হাজার ৫শ টাকা আসে। গত ০৩ জুলাই আমাদেরকে যুব উন্নয়নে ডাকা হয়। সেখানে আমাদের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দের ২ হাজার ৫শ টাকার মধ্যে প্রত্যেককে ১হাজার টাকা করে দিতে চাইলে আমরা তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পুরো টাকা দাবি করি। তখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকদের তোপের মুখে উপ পরিচালকের অফিসে বসে আমাদের সেই টাকা ফেরত দেন ইডি মোস্তফা জামান শেখ’। এসব ঘটনা সামনে আসার পর একের পর এক মুখ খুলতে থাকেন অন্যান্য ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীরা। সামনে আসে একই ঘটনার অতীত ইতিহাস।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘তিনি ১১তম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তাদের ব্যাচের প্রত্যেকের থেকে লার্নার করার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া সরকারি বরাদ্দের টাকা তারা পাননি’।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক আশিকুর রহমান, জাকির হোসেন, বিদ্যুৎ সরকারও একই অভিযোগ জানান।
এ বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক (ডিডি) সঞ্জীত কুমার দাস বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *