দু’মাসের পরিশ্রমে শোলমারী গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন শুরু

দেশজুড়ে

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪ ৯:০১ অপরাহ্ণ

মোক্তার হোসেন।।

আবুল হাওলাদার। রাজ্যের সকল চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। ছিল ঘের ভরা মাছ, গোলাভরা ধান। ঘেরের আইলে নানান প্রকার সবজি। মাসব্যাপী অব্যাহত বৃষ্টিতে আকাশ বন্যায় সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নেই বসবাস করার মত ভিটে-মাটিটুকুও। সব জায়গায়ই পানি। রাস্তায়ও চলছে নৌকা।

শুধু আবুল না এরকম বিলপাটিয়ালা গ্রামের সকল মানুষ আকাশ বন্যায় পানির তোড়ে ভিটে-মাটি ছাড়া। ডুমুরিয়া উপজেলার ২৩৭টা গ্রামের মধ্যে ২৩৬টি গ্রাম এখন পানিতে তলানো। উপজেলা প্রশাসন দিনরাত জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করলেও পউবো’র ধীর গতির কারণে এতবড় সর্বনাশের মুখে ডুমুরিয়া। তবে আশার আলো শোলমারী স্লুইচ গেট দিয়ে পানি অপসারণ কিছুটা শুরু হয়েছে। কাজের গতি বাড়ানো হলে এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি ঘরের পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে এবং একাধিক দায়িত্বশীল সুত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির ফলে ডুমুরিয়ার ১৪ টি ইউনিয়ন এখন পানির নিচেয়। আকাশ বন্যায় সমগ্র উপজেলার কমপক্ষে ১৩ হাজার মাছের ঘের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী। অধিকাংশ কাচাঁঘর ভেঙ্গে গেছে। ১৪ ইউনিয়ন জুড়ে বর্ষা মৌসুমে মৎস্য ঘেরে যেসব সবজির আবাদ হয়েছিল তা সব শেষ প্রথম বর্ষায়। দ্বিতীয় দফার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় সকল প্রকার মাছের ঘের। ভেসে যায় কয়েক শ’ কোটি টাকার বাগদা, গলদা ও সাদা মাছ। তৃতীয় দফার বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়।

এরপর অব্যাহত বৃষ্টিতে অধিকাংশ বাড়িতে হাটু পানি। অনেক গ্রামের মানুষ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় দিয়েছেন। আর এত বড় আকাশ বন্যার পানি নিষ্কাশনে নেই কোন প্রকার সুব্যবস্থা। উপজেলা জুড়ে পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ গেট অকোজো। প্রত্যেকটি গ্রেটের মুখে পলি পড়ে ভরাট। পানি উন্নয়ন বোর্ডেও কর্মকর্তাদের বেশ আগে থেকেই এসব ব্যাপারে সর্তক করণেও তাদের কোন যুগান্তকারী পদক্ষেপ না থাকায় ডুমুরিয়া এখন পানির তলে। তবে উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীর জোড়ালো দাবির মুখে এখন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে পাউবো।

ইতিমধ্যে ১০ বেন্টের স্লুইচ গেট শোলমারীর বাহির অংশে খননের জন্য ৩টি এস্কেবেটর কাজ করছে। ৩টার মধ্যে দু’টি ভাসমান। যার একটি রবিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। প্রতিদিন জলাবদ্ধ শ’ শ’ মানুষ শোলমারী গেটে যেয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। গত দু’দিন ধরে কিছুটা পানি অপসারিত হচ্ছে। ১০টি কপাটের মাত্র ৩টি কপাট খোলা রাখা হয়েছে। বাকি কপাট আরও কিছু খনন কাজ করার পর তোলা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে গত শনিবার সরেজমিন দেখতে যান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া। এলাকাবাসী এ সময়ে আরও কয়েকটি ভাসমান এস্কেবেটর এনে দ্রুত কাজ করার দাবি তোলেন। তাছাড়া ওই স্লুইচ গেটে চেইন কপ্পা ও হ্যান্ডেল বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ অপ্রতুল থাকায় আরও চাহিদার কথা জানায়। তবে দু’টি হ্যান্ডেলের ব্যবস্থা করণেও এখনও চেইন খপ্পার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসলে অধস্থন কর্মকর্তারা সব ধিক করে দেবেন বলে জানালেও পওে কোন ব্যবস্থা হয় না।

এদিকে নরনিয়া গেটের পলি অপসারণে ভাসমান এস্কেবেটর দিয়ে খনন করা হচ্ছে। বসানো হচ্ছে মটর। ডুমুরিয়া বাজারের পাশে ষষ্টিতলায়ও মটর লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তেলিখালী গেটে সেচ্ছাশ্রমে পলি অপসারন করা হয়েছে। সেখান থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। তাছাড়া অধিকাংশ গেটে পলি অপসারণের কাজ হচ্ছে।

এসব ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, আমরা দিন-রাত কাজ করছি। মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা মাথায় রেখে বন্ধের দিনেও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘন্টা কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে ডুমুরিয়ার অধিকাংশ গ্রামের পানি নিষ্কাশন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *