২০২২ সালেই পুতিন কেন ইউক্রেনে আক্রমণ করলেন

২০২২ সালেই পুতিন কেন ইউক্রেনে আক্রমণ করলেন?

আন্তর্জাতিক স্লাইড

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ

গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা চলছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালাবেন।  কিন্তু তা থেকে বিরত ছিলেন।  বিরত থাকার পর কেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ করলেন।  এ নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে বিশ্লেষকের।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মস্কো সব সময়ই ইউক্রেনে আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছে।  পুতিন বিভিন্ন সময়ে তার বক্তৃতা ও লেখায় ইউক্রেন কেন দখল করা উচিত সে বিষয়ে যুক্তিও দেখিয়েছেন।  সেই সব যুক্তির নিরিখে ২০১৪ সালে তিনি ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করেন।  তারপর ক্রমশ ইউক্রেনের বেশিরভাগ অঞ্চল কেন দখলের চেষ্টা করেননি তিনি?

গত শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এক বছর পূর্তি হয়েছে।  ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আলোচনায় এই প্রশ্নগুলো সামনে চলে এসেছে।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ।  তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও ‘রুশপন্থী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।  তার সময়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও দুর্বল ছিল।  তখন ইউক্রেনের বেশিরভাগ এলাকা দখল করা রুশদের জন্য অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল।

তারপরও পুতিন কেন ইউক্রেন আক্রমণ না করে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ করেছেন, তা নিয়ে রাশিয়ার কট্টরপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।  তারা এ নিয়ে পুতিনের সমালোচনাও করেছেন।

সেই সময়ে পুতিনের সংযমের কারণ ছিল ৯০ দশকের রুশ কৌশলের অংশ। কৌশলটি ছিল এমন—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা, পাশাপাশি ইউরোপজুড়ে রাশিয়ার নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করা।  এটি ছিল মিখাইল গর্বাচেভের কৌশল।  তিনি পশ্চিমকে ইউরোপে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

এই কৌশলের বিপরীতে গিয়ে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করত, তাহলে অবধারিতভাবেই পশ্চিমের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক আরও খারাপ হতো। এতে কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত।  রাশিয়ার তখন বিপজ্জনকভাবে চীনের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকত না।

পুতিনও একসময় এই ধারণাই অন্তরে লালন করতেন। তিনি ২০১২ সালে লিখেছিলেন, রাশিয়া বৃহত্তর ইউরোপের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।  এমনকি ইউরোপীয় সভ্যতার বৃহত্তর অংশই হচ্ছে রাশিয়া।  আমাদের নাগরিকেরা নিজেদের ইউরোপীয় বলেই মনে করে।  কিন্তু পুতিন এখন সেই ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছেন। তিনি এখন ‘ইউরেশিয়ান সভ্যতা’ ধারণাটি লালন করেন।

১৯৯৯ সালে রাশিয়ার মসনদে বসেন পুতিন।  আর ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসেন জো বাইডেন।  মাঝের এই দীর্ঘ সময়ে রাশিয়ার সেই ৯০ দশকের কৌশলটি ক্রমশ গুরুত্ব হারিয়েছে।  তবে প্যারিস ও বার্লিনের মধ্যে এখনো ধারণাটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন দিমিত্রি মেদভেদেভ।  সেই সময় তিনি একটি নিরাপত্তা চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন, যাতে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ঠেকানো যায়।  ইউক্রেন যাতে নিরপেক্ষ থাকে, সেই চেষ্টাও ছিল ওই প্রস্তাবে।  কিন্তু পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো প্রস্তাবটিকে খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।

২০১৪ সালে রাশিয়া কেন আর ইউক্রেনের ভেতরের দিকে অগ্রসর হয়নি, সে ব্যাপারে সম্ভবত জার্মান চ্যান্সেলর (তৎকালীন) অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সতর্ক বার্তা ছিল।  তিনি সে সময় ‘ব্যাপক ক্ষতি হবে’ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।  অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের হুঁশিয়ারিকে আমলে নিয়ে ইউক্রেনের দনবাসে রুশসমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছিলেন পুতিন।

রুশ প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিনিময়ে জার্মানি ইউক্রেনকে অস্ত্র দেবে না বলে অঙ্গীকার করে।  একই সময়ে আরেকটি ঘটনা ঘটে।  ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ‘মিনস্ক-২’ চুক্তি হয়।  এর মাধ্যমে দনবাস স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পায়।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ২০১৫ সালে জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মের্কেল ও ফ্রান্সের ফ্রাঁসোয়া ওলাদের মধ্যস্থতায় যে মিনস্ক-২ চুক্তি হয়েছিল, তা ছিল ইউক্রেনকে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সময় দেওয়ার একটি কৌশলমাত্র।  ২০২২ সালে এসে পুতিন সম্ভবত সেই ফাঁকিটুকু ধরতে পেরেছেন।  তাই ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালাতে আর দ্বিধা করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *