হাজারো শ্রমিকের কর্মস্থল নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দর

হাজারো শ্রমিকের কর্মস্থল নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দর

দেশজুড়ে

জুন ৭, ২০২৩ ৪:৫৮ অপরাহ্ণ

মাহফুজুর রহমান সোহাগ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
প্রতিদিন ভোর হলেই শ্রমিকরা দলে দলে ছুটে চলেন স্থলবন্দরে কয়লা, পাথর ভাঙ্গার কাজ করতে।  শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা নয়াবিল  ইউনিয়নে স্থাপিত দেশের অন্যতম নাকুগাঁও স্থলবন্দর এখন হাজারো শ্রমিকের কর্মস্থল। এই বন্দরটি আমদানি রফতানিকারকদের জন্য নতুন দিগন্তের পথ দেখাচ্ছে। এটি চালু হওয়ায় স্থানীয়রাসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করতে এসে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বন্দরের শ্রমিকরা জানান, বন্দরের কর্মকান্ডকে ঘিরে হাজারো শ্রমিক পেয়েছেন কর্মসংস্থানের পথ। এখানে শ্রমিকরা কাজ করে স্বাচ্ছন্দে তাদের সংসার পরিচালনা করতে পারছেন। এছাড়া এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান এই তিন দেশের ট্রানজিট রুটসহ ত্রিপক্ষীয় বাণিজ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।
বন্দর সুত্র জানায়, সম্ভাবনাময় এই নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির জন্য প্রথমে অনুমতি থাকা ১৯টি পণ্য হচ্ছে— গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে ও কোয়ার্টজ। এরপর নতুন করে আরো ৩টি পণ্য আমদানি তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এগুলো হলো— সুপরী, শুটকি ও ফ্লায়েস। সবমিলে এখন এই বন্দরে ২২টি পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ ৩৩ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৮ সালে নাকুগাঁও বন্দরটি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ স্থল শুল্কবন্দর হিসেবে পুনরায় চালু হয়। এরপর থেকেই এ বন্দর দিয়ে কয়লা, পাথর আমদানি এবং সিমেন্ট, শাড়ি, জুস, মশারির কাপড় ও জুটসহ নানা বৈধ পণ্য আমদানি রফতানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। কিন্তু অপ্রস্থ রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে এ বন্দরের সম্ভাবনা অনেকটা কমে গিয়েছিল।  পরে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ১৪শ শতাংশ জমির ওপর ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নাকুগাঁও থেকে নকলা উপজেলা পর্যন্ত সাড়ে ২৯ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ জুন নাকুগাঁও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব পরিচালনায় এর কার্যক্রম শুরু করে।
নাকুগাঁও স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, প্রতিদিন ভোর হলেই শ্রমিকরা বন্দরে কাজ করতে ছুটে আসেন। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সৌভাগ্যের প্রতীক এখন নাকুগাঁও স্থলবন্দর। আগে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কয়লা আসত। বর্তমানে বন্ধ থাকায় শুধু পাথর আমদানি হচ্ছে। বন্দরে ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিক রয়েছেন ৮শ জন। এছাড়া পাথর ভাঙার জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আরো ৩ হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মেশিনপত্র পরিচালনার জন্য প্রায় ৩শ জন শ্রমিক রয়েছেন। ইউনিয়নভুক্ত লোড আনলোড শ্রমিকরা গড়ে প্রতিদিন ৬০০—৭০০ টাকা মজুরি পান। আর অন্যরা ৪০০—৫০০ টাকা হারে মজুরি পেয়ে থাকেন। শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে।
বন্দরের পাথর শ্রমিক আয়নাল হক জানান, বাড়ির কাছে স্থলবন্দর হওয়ায় খুব সহজেই অমারা কর্মক্ষেত্র খুঁজে পাইছি। না হলে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে গিয়ে তাদের কাজ করতে হতো।
নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন চন্দ্র সরকার বলেন, এই বন্দরটি চালু হওয়ায় স্থানীয়রাসহ দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এখানে এসে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এই বন্দরে শ্রমিকের কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের সংসার চালাচ্ছেন।
নাকুগাঁও স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বন্দর দিয়ে অনুমোদিত নতুন ৩ টিসহ ২২ টি পণ্য আমদানি ও নিষিদ্ধ ব্যতীত সকল বৈধপণ্য রফতানি করা যাবে। সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধিতে আমরা ব্যবসায়ীদেরকে এ নিয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *