সীমান্তে ২ বছর পর ‘কান্নাকাটির মেলা’

দেশজুড়ে স্পেশাল

এপ্রিল ১, ২০২২ ১:৫৫ অপরাহ্ণ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তে প্রতিবছর চৈত্র মাসে একটি মেলা হয়। যা ‘সীমান্ত মেলা’ নামে পরিচিত। মেলায় অংশ নেওয়া মানুষদের দেখলে নামটির তাৎপর্য বুঝতেও যেন বাকিও থাকে না। তবে সীমান্ত মেলা হলেও মানুষের মুখে মুখে তা পরিচিতি পেয়েছে ‘কান্নাকাটির মেলা’ নামে।

গত বুধবার (৩০ মার্চ) দুপুরে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের ঘোঙ্গাগাছ সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে মালদহ নদীর তীরে এই মেলা হয়।

পাকিস্তান আমল থেকে মেলাটি হলেও করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ ছিল মেলার আয়োজন। দু’বছর পর বুধবার অনুষ্ঠিত হলো এ মেলা। আর এতেই ভারত-বাংলাদেশের হাজারো নারী-পুরুষ আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আর একেকজনকে দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চলে উপহারসামগ্রী বিনিময়ও।

সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও ভারতীয়রা জানান, উভয় দেশের নাগরিক মালদহ নদীতে পুণ্যস্নান করেন। বিশেষ করে ভারতীয় নাগরিকরা কাঁটাতারের বেড়ার পাশে এলাকায় গঙ্গাপূজা করার পর মালদহ নদীতে পুণ্যস্নান করে থাকেন। করোনাভাইরাসের কারণে ২ বছর পর সীমান্ত মেলাটির আয়োজন করার ফলে এ বছর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। দু’দেশের মানুষ অনেক দিন পর একত্র হয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন বলে এই মেলাকে সবাই কান্নাকাটির মেলা বলেই জানে।

মেলায় আসা রবিন্দ্রনাথ জানান, তার অনেক বয়স হয়েছে। শরীরে নানা রোগ দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন। তাই মৃত্যুর আগে ভারতে বসবাসরত বোনকে এক নজর দেখার জন্য এ মেলায় এসেছেন। বোনকে কিছু খাবার দিয়েছেন। বোনও তার জন্য খাবার এনেছিলেন।

তিনি আরো জানান, তাদের পাসপোর্ট তৈরি করার সামর্থ নেই। তাই সীমান্তে কান্নাকাটির মেলায় এসে ভারতীয় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেন।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা থেকে মেলায় এসে ছিলেন দীলিপ সিংহ। তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। দেখা করেন ভারতে বসবাস করা বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে। প্রায় এক যুগ পর ভাই-বোনের দেখা হলে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। এ সময় দুই ভাই বোন দু’দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করেন।

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, মিলনমেলায় লালমনিরহাটসহ পাশের জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার বাংলাদেশি এসেছিলেন। অধিকাংশ মানুষ এসেছিলেন ভারতে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে মেলাটি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। মেলা শেষে দু’দেশের নাগরিকরা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *