মস্তিস্ক বা ব্রেইন শরীরের বিশেষ একটা জায়গা, যা আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ব্রেইনের কোনো সমস্যা হলেই আমরা খুব বেশি চিন্তায় পড়ে যাই। এমনকি ব্রেইন তখন নিজেই তার সমস্যাকে গুরুত্বসহকারে দেখা শুরু করে। তেমনই একটি সমস্যা ব্রেইন টিউমার। এ টিউমারে জীবননাশের কারণ হতে পারে বিধায় এ রোগের নাম শুনলেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু সব ব্রেইন টিউমারে কি মৃত্যু হয়?
আমাদের দেশে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হন। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন সচেতনমূলক কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। যার জন্য প্রতিবছর ৮ জুন পালিত হয় বিশ্ব ব্রেইন টিউমার দিবস।
২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে গঠিত জার্মান ব্রেইন টিউমার অ্যাসোসিয়েশন নামের দাতব্য সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
সাধারণত কিছু অস্বাভাবিক কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যদি মস্তিষ্কে চাকার সৃষ্টি করে, তাকে ব্রেইন টিউমার বলে। ব্রেইন টিউমার শুধু মস্তিষ্কেও হতে পারে আবার শরীরের অন্য অংশে তৈরি হয়ে মস্তিষ্কে ছড়াতে পারে।
মাথাব্যথা ব্রেইন টিউমারের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। তবে শুধু মাথাব্যথাই ব্রেইন টিউমারের প্রাথমিক উপসর্গ নয়। সঙ্গে বমি হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, মুখের স্বাদ চলে যাওয়া, কাঁপুনি দেয়া, হাতের বা শরীরের একদিক অবশ হয়ে যাওয়া, ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা, চলতে গিয়ে পড়ে যাওয়া, ব্যক্তিত্বে বদল আসা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ভুলে যাওয়া ও আচমকা ব্ল্যাক আউটের মতো সমস্যা দেখা দিলেই তবে ব্রেইন টিউমার হিসেবে ধরা হয়।
দুই ধরনের টিউমার আছে। বেনাইন টিউমার, যা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং মস্তিষ্কের অন্যত্র ছড়ায় না। তবে টিউমারের আকৃতি বড় হলে টিউমারের চাপে মস্তিষ্কে সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ টিউমারে রোগী মারা যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হলেই তা নিরাময় সম্ভব।
আরেক ধরনের টিউমার, যা ক্যানসার হিসেবে গণ্য হয় ও দ্রুতই মস্তিষ্কের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা দেয়া হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই টিউমারও নিরাময় হয়। অন্যথায় রোগী মারাও যেতে পারে।
ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসানির্ভর করে টিউমারের আকার, ধরন, রোগীর বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর। সাধারণত অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, কখনো ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চা করে ব্রেইন টিউমার ঠেকানো যায়। তা ছাড়া যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
সূত্র: এবিপি আনন্দ