শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

ইত্যাদি

অক্টোবর ১৯, ২০২২ ৭:৫৫ অপরাহ্ণ

এ আর রাজ

শেখ রাসেল নির্মলতার প্রতীক, দুরন্ত প্রাণবন্ত নির্ভীক- এই শ্লোগানের মধ্য দিয়ে আজ, ১৮ অক্টোবর, সোমবার বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজধানীর বিজয়নগর পল্টন টাওয়ার ই আর এফ মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ পুত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহের ছোটভাই শেখ রিসালউদ্দিন রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডাঃ আব্দুস সালাম ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সভাপতি, প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি আ্যডভোকেট ড. মশিউর মালেক।

আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আ্যডভোকেট আব্দুল খালেক মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, কাজী মফিজুল হক, রাশেদা হক কনিকা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন শাহিন, সংগঠনের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং শীর্ষ খবর পত্রিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির), ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক টিপু সুলতান, আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী তাহের, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন অষ্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি মোল্লা রাসেদুল হক, আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য সৈয়দ আইনুল হক, হোটেল ৭১ এর মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন, ভারত কমিটির সভাপতি মীর শামিম, গাজীপুর শাখার যুগ্ম সম্পাদক এ আই আহমেদ জুয়েল, সহ সম্পাদক ডেভিড এ হালদার, নাছির উদ্দিন খান, মহানগর শাখার সহ-সভাপতি শেখ জালাল, আরমান হোসেন, মাওলানা আবুল খায়ের, কিশোরগঞ্জ শাখার সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান শাহিন, ধানমন্ডি থানা শাখার নেতৃবৃন্দ সহ প্রমূখ।

প্রধান অতিথি আ্যডভোকেট ড. মশিউর মালেক শেখ রাসেলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, আজ তিনি বেঁচে থাকলে আমাদের নেতৃত্ব দিতেন। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘর সংসার ছেড়ে রাজপথে নেতৃত্ব দিতে নামতে এবং বার বার হত্যার মুখোমুখি হতে হতনা। নিঃষ্পাপ শিশু রাসেলকে হত্যা করে সীমার তার নিজের পরিচয় জাতির কাছে তুলে ধরেছে। আজ বাঙ্গালী জাতি শুধু নয় সমগ্র বিশ্বই তাদেরকে ঘৃণা করে।

ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সভাপতি ডাঃ আব্দুস সালাম তার বক্তব্যে বলেন, শেখ রাসেল আমাদের আবেগের নাম। একমাত্র জানোয়ারই পারে এমন কোমল মতি একটি নিঃষ্পাপ শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে। আমি বিশ্বাস করি এই পার ঐপার দুই পারেই তাদের কঠিন বিচার হবে খোদার কাছে এবং দাবি করছি দেশের আইনের কাঠগড়ায়ও যেন তাদের কঠিন বিচার করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাশিদা হক কনিকা বলেন, শেখ রাসেলের ভুবন ছিল তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালকে ঘিরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ রাসেলকেও নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। এই বর্বর হত্যার মাধ্যমে মানুষরুপি হায়নাদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মচিত হয়েছে। আমি এই হত্যাযজ্ঞের মরণোত্তর বিচার চাই।

এসময় সহ-সভাপতি আ্যডভোকেট আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় লেখক খ্যাতিমান দার্শনিক ও নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে পরিবারের নতুন সদস্যের নাম রাখেন ‘রাসেল’। এই নামকরণে মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শৈশব থেকেই দুরন্ত প্রাণবন্ত রাসেল ছিলেন পরিবারের সবার অতি আদরের। কিন্তু মাত্র দেড় বছর বয়স থেকেই প্রিয় পিতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের একমাত্র স্থান হয়ে ওঠে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। তবে সাত বছর বয়সে ১৯৭১ সালে তিনি নিজেই বন্দি হয়ে যান। বাঙ্গালী জাতি যে সম্পদ হারিয়েছে তা কখনই আর ফিরে পাবেনা।

সহ-সভাপতি কাজী মফিজুল হক বলেন, ১৯৭৫ সালের ৯ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য জনাব শেখ শহিদুল ইসলামের বিবাহত্তোর অনুষ্ঠানে ঢাকা ক্লাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রায় সকল সদস্য, মন্ত্রী পরিষদ বর্গের সকল সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি আমার বয়স তখন ১৩ বছর। রাসেল ক্লাস ফোরে পড়ে। তখন ১১ বছরের দুরন্ত বালক। সেদিন তাকে যেভাবে আমি দেখেছি, অত্যন্ত প্রাণবন্ত হাসিখুশি নির্ভীক সাহসী এক বালক। ওই বয়সে অনুষ্ঠানের প্রায় সকলের দৃষ্টি ছিল রাসেলের দিকে । অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতা ফজিলতুনেচার সহ কামাল ভাই, শেখ জামাল ভাই সকলের দৃষ্টি ছিল রাসেলের দিকে।তখন সে ছিল কোট পরা এবং সংগে ছিল ক্যামেরা।রাসেল তখন ঘুরে ঘুরে দুরন্ত গতিতে অনুষ্ঠানের সকলের ছবি ধারন করেছে। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথিগণ রাসেলকে হাতের ইশারায় ডাকছে। চিপ শিপে পাতলা গরমের এই শিশু। কি অপরাধ ছিল এই ছোট্ট শিশুর? ১৫ ই আগস্ট এ পরিবারের নিহত সকল সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি সাফল্য কামনা করছি জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ।

অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) আবেগ আপ্ল‍ুত হয়ে বলেন, পৃথিবীতে বহু ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের উল্লেখ আছে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার হত্যা তার মধ্যে একটি। বিশেষ করে শেখ রাসেল হত্যা। নাবালক অবুঝ শিশুটিকে কিভাবে হত্যা করতে পারল আমি কখনই তা ভাবতে পারিনা। আমরা দেখেছি বনের পশুর হৃদয়েও অনেক মায়া থাকে। কিন্তু সেদিনের সেই পশুদের হৃদয় বলতে কিছু ছিল না বলেই আমার বিশ্বাস। হায় আফসোস! গোটা জাতি যদি আজ তাদের বিচার দেখতে পারত। আমি ঐ নরপশুদের কঠিনতম বিচার দাবি করছি।

আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব বলেন, আজকে আমাদের আলোচনার দিন নয়। আজকে আমাদের অনুভুতির দিন। আজ শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে হয়ত উনিই হতেন বিশ্ব নেতা। আমরা নিজেরাই নিজের জাতীর পিতা ও তার পরিবারকে হত্যা করেছি। আমরা নিজেরাই কলঙ্কিত জাতী মনে করি। আমরা এখনো সেই কলঙ্ক মোচন করতে পারিনি।

১৯৬৪ সাল ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজো ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজো ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড় সড় হয়েছিল রাসেল।’ সূত্র: শেখ হাসিনা, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’।

১৯৬৬ সাল কারাগারে দেখা করার সময় রাসেল কিছুতেই তাঁর বাবাকে রেখে আসবে না। এ কারণে তাঁর মন খারাপ থাকতো। কারাগারের রোজনামচায় ১৯৬৬ সালের ১৫ জুনের দিনলিপিতে রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “১৮ মাসের রাসেল জেল অফিসে এসে একটুও হাসে না- যে পর্যন্ত আমাকে না দেখে। দেখলাম দূর থেকে পূর্বের মতোই ‘আব্বা আব্বা’বলে চিৎকার করছে। জেল গেট দিয়ে একটা মাল বোঝাই ট্রাক ঢুকেছিল। আমি তাই জানালায় দাঁড়াইয়া ওকে আদর করলাম। একটু পরেই ভিতরে যেতেই রাসেল আমার গলা ধরে হেসে দিল। ওরা বলল আমি না আসা পর্যন্ত শুধু জানালার দিকে চেয়ে থাকে, বলে ‘আব্বার বাড়ি’। এখন ধারণা হয়েছে এটা ওর আব্বার বাড়ি। যাবার সময় হলে ওকে ফাঁকি দিতে হয়।

১৯৬৭ কারাগারের রোজনামচায় ১৯৬৭ সালের ১৪-১৫ এপ্রিলের অন্যান্য প্রসঙ্গ ছাড়াও রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “জেল গেটে যখন উপস্থিত হলাম ছোট ছেলেটা আজ আর বাইরে এসে দাঁড়াইয়া নাই দেখে আশ্চর্যই হলাম। আমি যখন রুমের ভিতর যেয়ে ওকে কোলে করলাম আমার গলা ধরে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে কয়েকবার ডাক দিয়ে ওর মার কোলে যেয়ে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে ডাকতে শুরু করল। ওর মাকে ‘আব্বা’ বলে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ব্যাপার কি?’ ওর মা বলল,“বাড়িতে ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ করে কাঁদে তাই ওকে বলেছি আমাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকতে।” রাসেল ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকতে লাগল। যেই আমি জবাব দেই সেই ওর মার গলা ধরে বলে, ‘তুমি আমার আব্বা।’ আমার উপর অভিমান করেছে বলে মনে হয়। এখন আর বিদায়ের সময় আমাকে নিয়ে যেতে চায় না।

১৯৭১ সালে রাসেল তাঁর মা ও দুই আপাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ধানমণ্ডি ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। পিতা বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি এবং বড় দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধে। মা ও আপাসহ পরিবারের সদস্যরা ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মুক্ত হন। রাসেল ‘জয় বাংলা’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বাইরে তখন চলছে বিজয়-উৎসব।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। তখন রাসেল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।

জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলম ইবনে হাই, ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন, মডেল ও অভিনেতা সুদীপ দেবনাথ রিমনসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *