শখ যাদের সাবলম্বী করে তুলেছে

দেশজুড়ে

মে ২৪, ২০২৩ ৭:১৬ অপরাহ্ণ

তামিম মিয়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়;

শখ! যান্ত্রিকতাময় জীবনের এক ক্ষুদ্র অংশ হলো শখ। শখ আমাদের যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি কাজেও শক্তি যোগায়। সেজন্য বলা হয় “শখের তোলা আশি টাকা।” সখের তোলা আশি টাকা হোক কিংবা না হোক, কিছু মানুষের জীবনে এই শখগুলোই পেশায় পরিণত হয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা এই শখের কাজগুলোকে নিজের পেশায় পরিণত করছে, হয়ে উঠছে সাবলম্বী। তাদের একাংশের শখের কথা নিয়েই আজকের গল্প।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭-১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা সুমি। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে সাবলম্বী করে তুলেছেন শখের কাজগুলো করার মাধ্যমে। জামাকাপড়ে পেইন্টিং এর পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়েও কাজ করছেন তিনি। ইলাস্ট্রেশন শপ আর পুরাঙ্গনা নামক দুইটি পেইজের মাধ্যমে তিনি তার কাজগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন । গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ও পেন্টিং এ পার অর্ডারে সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে ছয়শত টাকা আয় হয় তার। এ নিয়ে সুমি বলেন,
“ভবিষ্যতে যাই করিনা কেন আমি আমার শখের কাজগুলো চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। ধীরে ধীরে পেইজ দুটি বড় করারও ইচ্ছা আছে, এবং একটা সময় পর পুরোপুরি ভাবে সময় দিতে চাই এই কাজে।”

তার এই কাজে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন পরিবার এবং আশে পাশের মানুষদের থেকে। সবার অনুপ্রেরণা পেলে তিনি আরো ভালো কাজ করার কথাও জানান।

শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা পেইন্টিং নয়, কুবি শিক্ষার্থীদের শখ ছড়িয়েছে ছাদ বাগান পর্যন্ত। ছোট বেলায় পরীক্ষার খাতায় আমাদের প্রিয় শখ বাগান করার কথা হয়তো আমরা অনেকেই লিখতাম, কিন্তু বড় হয়ে সেই শখের কাজটা ক’জনেই বা করে। এমন কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ রয়েছেন যারা বড় হয়েও শখটি ধরে রাখেন। সেরকম একজন হলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আফজাল হোসেন। তিনি তার বাসার ছাদে করছেন এডোনিয়ামের বাগান। সেখান থেকে নিজের মানসিক প্রশান্তি ছাড়াও পাচ্ছেন অর্থনৈতিক সাহায্য। একেকটি এডোনিয়াম তিনি সাত থেকে আটশত টাকায় বিক্রি করেন। বনসাই এর দাম ছড়িয়ে যায় হাজার টাকার উপরে। এ নিয়ে আফজাল বলেন,
” ছোট বেলা থেকে বাগানের প্রতি আমার আলাদা একটা দূর্বলতা ও শখ ছিলো। করোনাকালে যখন ঘরবন্দী সময় কাটছিলো তখন সেই শখটিকেই নিয়ে কাজ শুরু করি। অন্যান্য গাছের পাশাপাশি বীজ থেকে এডনিয়ামের চারা উৎপাদন করছি। আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকেও ভালো সাড়া পাচ্ছি।”

কুবি ক্যাম্পাসেই এরকম আরও অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা নিজের শখ দিয়েই নিজেকে ব্যক্ত করার প্রয়াস করছেন। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত তাজবীন আবৃত্তি দিয়েই নিজেকে প্রকাশ করতে চান, চান আবৃত্তির এই ধারা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে।

২০০৮ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় গোলাম মোস্তফার কিশোর কবিতাটি আবৃত্তি করে ‘ক’ বিভাগে ৩য় স্থান অর্জন করার মধ্য দিয়েই আবৃত্তির সাথে পথ চলা শুরু হয় তার। প্রতিযোগিতার জন্য কবিতাটি তার মার কাছ থেকে শিখেছিলেন। পরবর্তীতে এই কন্ঠচর্চার মাধ্যমেই নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটান।

তার আবৃত্তির ঝুলিতে রয়েছে একাদিক পুরুষ্কার। হয়েছেন থিয়েটার ইন্ট্রা ইউনিভার্সিটি কালচারাল ফিস্ট ২০২৩ – চ্যাম্পিয়ন। এছাড়াও অনুপ্রাস অন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ২০২২-চ্যাম্পিয়ন, অঙ্গন মেগা কালচারাল কম্পিটিশন ফর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট – চ্যাম্পিয়ন(আবৃত্তি), জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭- জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন সহ স্কুল কলেজ পর্যায়ের তার একদিন পদক রয়েছে।

বর্তমানে সেই আবৃত্তিকেই তিনি ক্যারিয়ার হিসাবে নিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় আবৃত্তির ক্লাস/সেশন নিচ্ছেন। আবৃত্তির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার স্বপ্ন দেখেন রুবাইয়াত। এ নিয়ে তিনি বলেন, ” আবৃত্তি আমার শখের জায়গা। শেখার পথ পুরোটাই বাকি, আবৃত্তি নিয়ে আরো জানতে চাই শিখতে চাই, এবং শেখাতে চাই। ভবিষ্যতে আবৃত্তি শিল্পী হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই।”

আবৃত্তি, বাগান কিংবা ছবি আঁকার পাশাপাশি ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়েও নিজের স্বপ্নকে ফুটিয়ে তুলতে চান অনেক শিক্ষার্থী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম আবরারের ফটোগ্রাফির শুরু হয় শখের বসে। সেই শখ থেকেই ক্যামেরা কেনেন। তারপর ক্যাম্পাসে বন্ধুবান্ধব এবং বিভিন্ন সংঠনের সিনিয়রদের প্রেরণায় প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি শুরু করেন । ২০২২ এ একটি র‍্যাগ-ডে কাভার করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফি। ক্যম্পাস ফটোগ্রাফিতে তার আয় হয় মোটামুটি। একেকটা সেশনে একেক রকম। যেমন: আঞ্চলিক সংগঠনের সেশন গুলোতে এক থেকে দেড় হাজার, আর ক্যাম্পাসের সংঠনগুলোও তাদের প্রোগ্রাম অনুযায়ী পেমেন্ট করে।

ফটগ্রাফি নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলো আবরার জানান, ” আমি চাই ফটোগ্রাফিকে ধারণ করে এমন আরো কিছু মানুষ নিয়ে একটা টিম তৈরী করতে। এ অনুযায়ী কাজ করছি। সাথে কিছু দরকারি ইন্সট্রুমেন্টও জোগাড় করছি। ফটোগ্রাফি তে বিভিন্ন অনুষঙ্গকে জানা এবং আলোর পরিমাপ করতে পারাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আশপাশের আগ্রহীদেরও বিষয়টি জানাতে চেষ্টা করি।”

আবরারের মতো নিজের শখের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী। নিজের শখকেই বিমূর্ত করতে চান তারা, নিতে চান ক্যারিয়ার হিসাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *