“ভিন্ন আঙ্গিক, দর্শন ও ভাবনার পলেস্তারায় ভালোবাসা দিবস”

ফিচার

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ ১১:৪১ অপরাহ্ণ

পবিত্র কুমার দাস, 

আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী…., পুরোনো সেই দিনের কথা….., ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি…., মনে রবে কি না আমারে…., যদি তর ডাক শুনে কেও না আসে তবে একলা…. ইত্যাদি গান গুলো রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী প্রেমের গান। নারীপুরুষের প্রেম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য থাকলেও মানুষ প্রেমে পড়ে, প্রেম করতে পছন্দ করে। প্রেমের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন লাইলি, মজনু, শিরিন, ফরহাদের প্রেম কাহিনী, যুগে যুগে প্রেমে পড়ছেন বিভিন্ন মহান কবি, মনিষী গন। আবার প্রেম নিয়েও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দর্শন, ভাবনা। ভিন্ন দর্শন আর ভাবনা নিয়ে ভালোবাসা দিবসের বিশেষ আয়োজন “ভিন্ন আঙ্গিক, দর্শন ও ভাবনার পলেস্তারায় ভালোবাসা দিবস”। যেখানে ভালোবাসা এবং পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে কথা বলেছে বিভিন্ন জন।

রুবেল হাসান, শিক্ষার্থী এমএসএস, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি এবং আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। বিশেষ কিছুর প্রতি স্নেহ ও সম্মানের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশই ভালোবাসা। মানুষ যখন ভরসা করার মতো কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে খোজে পায় তখন তার অন্তরে একপ্রকার ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে আর সে থেকেই ঐ ভরসা যোগ্য ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি ভালেবাসার জন্ম নেয়। ধর্মের প্রতি, আত্মীয়ের প্রতি আত্নীয়ের, মা-বাবার প্রতি সন্তানের,সন্তানের প্রতি মা-বাবার,ভাইয়ের প্রতি বোনের, বোনের প্রতি ভাইয়ের সৃষ্ট পজেটিভ অনুভূতিই ভালোবাসা । এমন কি যদি কোনো পোষ্য প্রাণী বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ বা অনুভূতি কাজ করে সেটিও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ । তাই ভালোবাসাকে একটি নিদিষ্ট গন্ডির ভিতর সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিৎ নয়। ভালোবাসা সার্বজনিন।।বর্তমানে নারী পুরুষ উভয়ে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সেখানেও আমরা ভালোবাসার অভিপ্রায় লক্ষ্য করি।যখন তাদের মাঝে ভালোবাসার অভাব দেখা দিবে অর্থাৎ ভালোবাসাহীনবোধ অনুভব করবে তখন তাদের কাজের ক্ষেত্রে এক প্রকার বিরূপ মনোভাব বিরাজ করবে।একজন মেয়ে যখন তার বাবাকে হিরো মনে করে তখন সে বাবার গুণগুলো চোখের সামনে দেখতে পায় এবং সে তার যাবতীয় দুঃখ কষ্ট শেয়ার করার উপায় খোঁজে পায়।তখন বাবার প্রতি তার পজেটিভ অনুভূতি সৃষ্টি হয় আর সেটিই ভালেবাসা।তেমনি একজন ছেলের কাছে তার মা হতে পারে ভালোবাসার অন্যতম ব্যক্তিত্ব ।যদি মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, তিনটি মূল বিষযকে কেন্দ্র করেই ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। ইনটিমেসি যা আবেগীয় ঘনিষ্টতাকে বুঝায়,প্যাশন যাতে জৈবিক একটা আকর্ষণ থাকে এবং দায়বদ্ধতা। মানুষ যখন একজনের প্রতি অন্যজন নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করে তখন তাদের মাঝে ভালোবাসা সু সম্পর্ক তৈরি হয়। আমরা আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করলে দেখতে পাই, অনেক নরনারী ভীষণ ভালোবাসার সম্পর্কের মধ্যে রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ভীষন জৈবিক আকর্ষণ রয়েছে। আবেগীয় ঘনিষ্টতাও রয়েছে, তবে দায়বদ্ধতা নেই। দেখা যায় আস্তে আস্তে তাদের ঘনিষ্টতা কমে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, জৈবিক আকর্ষণও রয়েছে। কিন্তু আবেগীয় ঘনিষ্টতার অভাব। ধীরে ধীরে তাদের মাঝে সম্পর্কের ফাটল দেখা দেয়।এতে তাদের প্রকৃত সুখ, শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। সেটি আপাতত দৃষ্টিকোন থেকে ভালোবাসা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে ভালোবাসার মৌলিক দিকটি উপেক্ষিত। তিনটি বিষয়ের সম্বন্বয়ে কেবল ভালোবাসা পূর্নতা পায়।সুতরাং ভালোবাসাকে একটি নিদির্ষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সার্বজনীন কল্পনা করায় শ্রেয়।তাইতো ভালোবাসা সার্বজনিন।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকলের ভালোবাসা।সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।শুভ ভালোবাসা দিবস।

পবিত্র কুমার দাস, শিক্ষার্থী এমএসএস, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়।

ভালোবাসা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই মনে হয় দুই পৃথিবী সিনেমার একটি বহুল জনপ্রিয় কথা ” ভালোবাসা ভালোবাসে শুধুই তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসায় বেধে যে রাখে “। বাস্তবিক অর্থে ভালোবাসা জিনিসটি এমনি। ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসা বলতে বুঝি একটি ছেলে এবং মেয়ে এক অপরের ভালোবাসাকেই৷ ভালোবাসা মধুর, ভালোবাসা কষ্টের, ভালোবাসা যন্ত্রণা যা কিনা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয় কারন কাউকে ভালোবাসে মনে জায়গা দিলে কখনই ভুলে যাওয়া যায় না। । কথায় আছে ট্রু লাভ নেভার ইন্ড যা চিরন্তন সত্য। পৃথিবীর বেশির ভাগ ভালো বাসা গুলো এক পাক্ষিক হয়, কিছু ভালোবাসা দুই পাক্ষিক হয় যা প্রেমে পরিণত হয়, এদের মধ্যে আবার কিছু সারাজীবন ঘর বাধে আবার কিছু বিচ্ছেদের কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করে৷ ভালোবাসা পবিত্র যখন বিদ্যমান থাকে পারস্পারিক বিশ্বাস, আবেগ, ভালো লাগা। যখনই এদের ভিতর কোনো একটি কমে যায় এর চেয়ে বিষাক্ত কিছু হতে পারেনা। এই পরিস্থিতিটাই যথেষ্ট একজন বা দুজনকেই ধ্বংস করে দিতে। তারপরও মানুষ ভালোবাসে এবং ভাসবেই এটাই সহজাত প্রবৃত্তি। এক্ষেত্রে প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ুন ফরদীর একটি কথা মনে পড়ে “আপনি যখন কাউকে ভালোবাসবেন একবুক হ্রদয় নিয়ে ভালোবাসবেন তার সকল অন্যায় ক্ষমা করার মানসিকতা আপনার থাকতে হবে”। ঠিক তাই যেখানে সহনশীলতা, পারস্পারিক সহমর্মিতা, ক্ষমা করার মানসিকতা বিদ্যমান সেখানেই ঠিকে থাকে সত্যি কারের ভালোবাসা। ভালোবাসা একটা লম্বা সিলেবাস এটার গন্তব্য কোথায় একজন মানুষ জানেনা তাই থাকতে হবে ধৈর্য। একটি সম্পর্ক চলার পথে মনোমালিন্য, বিচ্ছেদ হতেই পারে কিন্তুু মনে রাখবেন যে সত্যিই আপনাকে ভালোবাসবে সবকিছুর বাধা পেরিয়ে সে আপনারই থাকবে আর যে আপনার না হাজার চোখের জল, হাজার চেষ্টার পরও আপনার থাকবে না। তাই এই ভালোবাসা দিবসে আশা রাখি প্রতিটা ভালোবাসার সম্পর্কের ভিতর গড়ে উঠুক অগাত বিশ্বাস, মায়া, মমতা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সহনশীলতা ও ধৈর্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *